পরিশুদ্ধ সমাজের জন্য বিয়ের গুরুত্ব

পরিশুদ্ধ সমাজের জন্য বিয়ের গুরুত্ব

অনলাইন ডেস্ক

পৃথিবীর আদি মানুষ আদম। তখনো আদি মানবীর সৃষ্টি হয়নি। আদম আল্লাহর নির্দেশে জান্নাতের এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। ফুলের সৌরভ, পাখির কলরব, নদীর কলকল সুর আদমের মনে এক ধরনের হিল্লোল বইয়ে দেয়।

কিন্তু সে হিল্লোল বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আদমের মনে আনন্দ আছড়ে পড়েই আবার মিলিয়ে যায়। আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ধীরে ধীরে আদম বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন।
সব থেকেও যেন তাঁর কিছুই নেই এমন। আল্লাহ বুঝতে পারলেন আদমের সঙ্গীর অভাব। তিনি সৃষ্টির করলেন এক রূপবতী রমণীকে। যিনি পৃথিবীর প্রথম নারী। রাজ্যের রূপ ঝরে পড়ে তাঁর দেহে। নাম তাঁর হাওয়া।

আদম হাওয়াকে দেখেই বিস্ময়ে হতবাক। সঙ্গ চাইলেন এই রূপবতীর। আল্লাহতায়ালা আখেরি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়াকে মোহরানা নির্ধারণ করে আদমের সঙ্গে হাওয়ার বিয়ে সম্পন্ন করে দিলেন। শুরু প্রথম মানব-মানবীর পবিত্র বন্ধন তথা বৈবাহিক জীবনের। তাঁরা সন্তান জন্ম দিয়ে হলেন পৃথিবীর আদি পিতা ও মাতা। কিছুদিন পর এ আদমই হলেন পৃথিবীর প্রথম নবী। এখন তিনি আর শুধু আদম নন, হয়ে গেলেন হজরত আদম। আদম সফিউল্লাহ। এভাবেই বিয়ের মাধ্যমে মানবসভ্যতার যাত্রা।

মোমিনদের বিয়ের নির্দেশ দিয়ে আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওয়ানকিহুল আয়ামা মিনকুম। ওয়াসসালিহিনি মিন ইবাদিকুম’। অর্থাৎ ‘হে বিশ্বাসীসমাজের বাসিন্দারা! তোমাদের মধ্যে যেসব যুবক-যুবতী সিঙ্গেল রয়েছে, তাদের বিয়ে দিয়ে দাও। এবং তোমাদের যোগ্য দাস-দাসীদেরও বিয়ের ব্যবস্থা কর। ’ সুরা নুর, আয়াত ৩২।

আরও পড়ুন:

রাস্তায় ফেলে চলে যাওয়া চামড়াগুলোতে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে

করোনায় প্রাণ গেলো একজন ভাষা সৈনিকের

একটি পরিশুদ্ধ সমাজের জন্য বিয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এ আয়াত থেকেও বোঝা যায়। যারা বিয়ে করে না তাদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রসুল (সা.)। বুখারির বর্ণনা থেকে জানা যায়, একজন সাহাবি বিয়ে না করে জীবনভর ইবাদতের সাগরে ডুবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। রসুল (সা.) তাঁর এ কথা শুনে ফেলেন। তিনি প্রচন্ড রাগ হয়ে বললেন, আরে! তোমাদের সবার চেয়ে বেশি মুত্তাকি আমি। আমি ইবাদতও করি, নারীসঙ্গও করি। এরপর পুরো উম্মতকে উদ্দেশ করে রসুল (সা.) বললেন, ‘আননিকাহু সুন্নাতি। অর্থাৎ বিয়ে হলো আমার সুন্নত। যারা আমার সুন্নত পালন করবে তারা আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে। আর যারা আমার সুন্নত ছেড়ে দেবে তারা আমার উম্মতই নয়। ’ বুখারি : কিতাবুন নিকাহ।


মাওলানা আবদুর রহিম তাঁর বিখ্যাত ‘পারিবারিক জীবন’ গ্রন্থে লিখেছেন, ইসলামে বিয়ের ব্যাপারে এত গুরুত্ব দেওয়ার পরও অনেক সময় যুবক-যুবতীরা কেবল দারিদ্র্যের অজুহাতে বিয়ে করতে রাজি হয় না। তারা মনে করে বিয়ে করলে আর্থিক দারিদ্র্য বেড়ে যাবে। আর এ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে বা আরও বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ না হলে জীবনমান নিচে নেমে যাবে কিংবা জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। যুবক-যুবতীদের এ ধরনের চিন্তা-চেতনা শরিয়তের আলোকে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এসব চিন্তা সঠিক বলে মেনে নেওয়া যায় না। কেননা মানুষের আয়-রোজগার স্থায়ী বা অপরিবর্তনীয় কোনো বিষয় নয়। যে আল্লাহ আজ একজনকে ৫০ টাকা দিচ্ছেন, কাল সে আল্লাহই তাকে ১০০ টাকা দিতে পারেন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

news24bd.tv রিমু

এই রকম আরও টপিক