মেসি-বার্সা : বাঁধন ছেঁড়ার ক্বাসিদা

মেসি-বার্সা : বাঁধন ছেঁড়ার ক্বাসিদা

Other

লিওনেল মেসি'র সাথে বার্সেলোনার ২১ বছরের বন্ধন অবশেষে ছিন্ন হতে চলেছে। যদিও শোনা গিয়েছিলো যে, বেতন অর্ধেক কমিয়ে ০৫ বছরের জন্য চুক্তি করতে উভয়পক্ষ একমত হয়েছিলো, তথাপিও লা লিগার ক্লাবের খরচের সিলিংয়ে না কুলানোয় চুক্তি হতে পারেনি বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় বার্সেলোনা।  

ক্লাবের #ঘরের_ছেলে, আজীবন বার্সায় থাকতে বদ্ধপরিকর মেসি ইত্যাকার কথাবার্তা হামেশাই শোনা গেলেও বার্সায় শেষ কয়েক বছর খুব একটা স্বস্তিতে কাটেনি মেসির। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ২০১৫ তে।

এরপর ক্রমাগত পর্যদুস্ত হতে হতে বায়ার্নের কাছে ৮-২ গোলে লুটপাট হতে হয়। তবে লা লিগাসহ ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় যে দাপট অব্যাহত ছিলো তাও ক্রমে ধূসর হতে হতে শেষ বছরে ফিরতে হয় একদম শূন্যহাতে।  
মেসির এই মহানিষ্ক্রমণের পটভূমি তৈরিতে মাঠের দলগত ব্যর্থতার সাথে সাথে আর যেসব ঘটনার দায় আছে সেসবের মধ্যে আছে- 
১. পেপ গার্দিওলা'র পর ক্লাবের সফলতম কোচ লুইস এনরিকের চেয়ারে বসে পরপর ২টি লা লিগা এনে দেয়ার পরও অন্যসব খেলায় ব্যর্থতা ও খারাপ ফর্মের দায়ে লিগের মাঝপথেই কোচ এরনেস্তো ভেলভার্দে চাকুরি হারান। এর জন্য মেসি'রই সাবেক সতীর্থ ও বার্সা পরিচালক এরিক আবিদাল এই বরখাস্তের জন্য গড়ে খেলোয়াড়দের দায়ী করে বসেন।
এ নিয়ে খেলোয়াড়রা মেসির নেতৃত্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠেন। সামাজিক মাধ্যমে মুখ খোলেন। বিতর্ক তুঙ্গে উঠলে আবিদাল চাকুরি হারান সাথে সাথে ক্লাব সভাপতি বার্তেমিউ'র নেতৃত্বের সাথে মেসিসহ জ্যেষ্ঠ ফুটবলারদের দূরত্ব তৈরি হয়।  

২. হঠাৎ করেই স্পেনের মিডিয়ায় একটা বেশ বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন ছাপা হয় যে, বার্তেমিউ ও বার্সা বোর্ডের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার তাগিদে বার্সাবোর্ডই ১১ ভেঞ্চারস নামের একটা কোম্পানিকে ভাড়া করে সোশাল মিডিয়ায় মেসি, পিকের মতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের নামে কুৎসা রটনা করার জন্য। মেসি আবারো মুখ খোলেন। বার্তেমিউ'কেও আসরে নেমে অস্বীকার করতে হয় খবর। তবে তাতে সম্পর্ক নূতন ডেরা পড়া থেকে রক্ষা পায়নি।  

৩. বার্তেমিউ'র সাথে মেসি সম্পর্ক এতোটাই বিষিয়ে ছিলো যে তারা এমনকী চোখে চোখ রেখে কথাও বলতেন না। তার পদত্যাগের পর প্রাক্তন সভাপতি তার সাথে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা ও অসংখ্য মিথ্যা বলেছেন বলে ক্ষোভ উগরে দেন মেসি।  

৪. ভেলভার্দেকে বরখাস্ত করে বার্তেমিউ কিকে সেতিয়েনকে নিয়োগ দিয়ে মেসির অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে দেন। কোচের ট্যাকটিক্স নিয়ে মেসিদের আপত্তি ছিলো আগাগোড়া। এক খেলায় মাঠেই তাদের খটাখটি লেগে যায়। মেসি কোচকে ক্লাবের সফলতম খেলোয়াড়দের যথাযথ সম্মান করার জন্য বলেন। তখনই কোচ মেসিকে- আমার কথা পছন্দ না হলে রাস্তা মাপতে পারো, দরজা কোন দিকে তা জানো আশা করি, বলে ঝাড়ি দেন বলে শোনা যায়। কোচ হিসেবে তার শেষটাও হয় ভয়াবহ ৮-২ হারের পর বরখাস্ত হয়ে। চাকুরি হারানোর পর সেতিয়েন "মেসিকে সামলানো কঠিন। ক্লাবই যদি ওকে এমন বানায় তবে আমি বদলানোর কে?" বলে মন্তব্য করেন।  

৫. চ্যাম্পিয়নস লিগের ৮-২ গোলের বিপর্যয়ের পর ক্লাব মেসির সবচে' কাছে বন্ধু ও ক্লাব কিংবদন্তি লুইস সুয়ারেজকে অসম্মানজনকভাবে পত্রপাঠ বিদেয় করে দেয় বার্তেমিউ'র বোর্ড। এতে মেসি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। যা শেষে সেই #ব্যুরোফ্যাক্স কাণ্ডের জন্ম দেয়।  

৬. বিষ্ফোরিত মেসি ব্যুরোফ্যাক্স করে ক্লাব ছাড়া নোটিশ দিলে আলোড়ন পড়ে যায় ক্লাবসহ সারা বিশ্বে। সমর্থকরা তাৎক্ষণিকভাবে ক্লাবের গেটে জড়ো হয়ে বার্তেমিউ আর বোর্ডের মুণ্ডুপাত করেন। টালমাটাল বার্তেমিউ'র বোর্ড চুক্তির সংকীর্ণ ব্যাখ্যা, আদালতে তোলার প্রচ্ছন্ন হুমকি ইত্যাদি দেখিয়ে মেসিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে মেসিকে ক্লাবে রাখতে সক্ষম হলেও নিজের গদি ধরে রাখতে পারেননি।  

৭. সবচে' বড় ধাক্কা তখনই লাগে যখন ক্লাবের সাথে মেসির গোপনীয় #চুক্তি_ফাঁস হয়ে যায়। তাও এমন সময় যখন কোভিডজনিতঃ কারণে বার্সা ১ বিলিয়ন দেনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আর মেসি আছেন ক্লাবের সাথে নতুন চুক্তি করার অবস্থানে। আবার ক্লাবের  নির্বাচনও সামনে। এল মুন্ডু পত্রিকা এমন শিরোনাম করে যে- মেসির দায়ে ডুবছে বার্সা! সভাপতি বার্তেমিউ এই লিকের জন্য তিনি দায়ী নন, ক্লাবের গোপন তথ্য চুরির দায়ে পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি ও এই খবর অসত্য দাবি করলেও খুব বেশি লোক তাকে বিশ্বাস করেনি।  

অন্যসব বাস্তব সমস্যা থাকলেও প্রাগুক্ত কারণগুলোও যে মনভাঙ্গা মেসিকে ক্লাবের পক্ষে খেলার জন্য সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করতে উৎসাহ যোগায়নি, সেটাই বা কে জানে? 

আশার কথা হলো- সদ্যই কোপা জেতা মেসি আছেন বেশ চাঙ্গা মনোবল নিয়ে। আর তর্কযোগ্যভাবে বিশ্বসেরা ফুটবলার মেসি হলেন খেলাটিরই একজন চ্যাম্পিয়ন এম্বাসেডর। শতাব্দীতে এমন ফুটবলার ২/৪ জনের বেশি জন্মান না। মেসি বার্সা, লা লিগ…

লেখাটি মিল্লাত হোসেন-এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ( লেখাটির আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

মিল্লাত হোসেন, বিচারক

news24bd.tv/আলী