যতো বেশি পদ, ততো বেশি সম্মান

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি

যতো বেশি পদ, ততো বেশি সম্মান

Other

আমরা এখন ভাইরাস অধ্যুষিত সময়ে বাস করছি। করোনা ভাইরাসের ভয়ে বাস করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর ভাইরাল বিষয়গুলো কেউ খুব একটা ভয় পাচ্ছে বলে মনে হয় না।  

নিজের গুণ প্রচার করা, অন্যকে হাস্যকর করে দেওয়ার নানা ভাইরাল কর্মকাণ্ড আমাদের চোখে পড়ছে। ফলে, নৈতিকতা, সামাজিক রীতি ইত্যাদি শব্দগুলোর সংজ্ঞার পরিধি দিন দিনই বদলে যাচ্ছে।

তো, ভাইরালের জগতের সব শেষ আইটেম একটি খাবার টেবিল এবং মনে হচ্ছে একজন মন্ত্রীর খাবার গ্রহণের ছবি।

ছবিতে মনে হয় তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদকে খাবার গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে, যদি আমি ভুল করে না থাকি। তার সামনে টেবিলে অনেক পদের খাবার রাখা আছে। মন্ত্রীর পাশে কেউ নেই, তিনি একাই খাবার গ্রহন করছেন।

 

ছবিটি তার কাছের মানুষই তুলেছেন এটা মোটাদাগে ধরে নিতে পারি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন, তা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যাচ্ছে না।  

এই ছবি ছড়িয়ে পড়লে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। মুশকিল হলো, এই ছবির নানারকম ব্যাখ্যা হচ্ছে। ফেইসবুক যেহেতু সম্পাদনা-বিহীন জগত, ফলে সবাই নিজের মনের কথাগুলো লিখে ছবিটি শেয়ার করছেন। এতে করে রাজনৈতিক বিবেচনা, পছন্দ-অপছন্দ, স্বার্থ, হিংসা, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে না জানা ইত্যাদি নানা বিষয় ছবির ক্যাপশন হিসেবে স্থান পাচ্ছে । কে কী লিখেছে তা উল্লেখ করছি না।  

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আগে গ্রামে কারো বাড়িতে গিয়ে এক গ্লাস পানি চাইলে সঙ্গে একটা মোয়া অথবা নাড়ু দেওয়া হতো। এই আচরণের কী অনুবাদ করা যায়? এদেশের মানুষ অপরকে খাওয়াতে ভালোবাসে। এটা এদেশের অতিথিপরায়নতা ও অপরকে সম্মান জানানোর একটা উপায়ও।  

আমাদের মায়েরা মেয়েদেরকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেন। রান্নার টিপস, পরিবেশনের টিপস। তারা জানিয়ে দেন, কারো সামনে যতো বেশি পদের খাবার রাখা হয় তাকে ততো বেশি সম্মান দেওয়া হয়। তিনি সব খাবার খেতে পারুক না পারুক। ফলে, একজন মন্ত্রী বা একজন ইমাম বা একজন নেতা বা একজন শিক্ষক বা একজন অতিথির সামনে অনেক পদের খাবার রেখে তাকে সম্মান জানানো হবে, এটাই এই দেশের সংস্কৃতি।  

যাহোক, আপনারা নিশ্চয়ই পঞ্চব্যাঞ্জন, অষ্টব্যাঞ্জন শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত আছেন। এগুলো এদেশের প্রতিদিনের খাবারের টেবিলে বর্ণনা দিতে ব্যবহার করা হয়। খাবার ছাড়া এই দেশে কোনো উৎসব আমরা উদযাপন করতে পারি? ঈদ, রোজা, পূজা, বড়দিন, বৈসাবি, হালখাতা, বিয়ে, মুসলমানি, কুলখানি, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী কোথায় খাবারের আয়োজন নেই? এই সব আয়োজন কী এক পদ দিয়ে শেষ করা যায়?

যা হোক, ছবিটা দেখে আমার ভালো লেগেছে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন বাংলাদেশের সব মানুষের এমন আয়োজন করার সামর্থ্য তৈরি হবে।

ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভাইরাল ছবি

[নোট: এই লেখা শেষ করার পর ফেইসবুকে আরো একটি ছবি দেখলাম। সেখানে দুটো ছবি পাশাপাশি দিয়ে বলা হয়েছে একটি নকল আরেকটি এডিট করা। সেই ছবিতে দাবি করা হয়েছে, এটা আসলে মন্ত্রীর ছবি না। ]

(সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

আরও পড়ুন:

দিনকে রাত বানিয়ে এবার দেশের নামই 'বদলে' দিল বিসিবি


news24bd.tv/ নকিব