রংপুরে প্রধান শিক্ষকের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

সংগৃহীত ছবি

রংপুরে প্রধান শিক্ষকের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

রংপুরের বদরগঞ্জে বিদ্যালয়ে পিয়ন নিয়োগের নামে এক প্রধান শিক্ষকের গুনে গুনে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।  জানা গেছে, উপজেলার আউলিয়াগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন অফিস সহায়ক (পিয়ন) পদে নিয়োগের জন্য গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে ১৫ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন।

 

অভিযোগ উঠেছে, এ ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই একজনের সঙ্গে ১৩ লাখ টাকায় নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। তার কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়। সেই টাকা গনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জানা যায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির ভাতিজাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।  

প্রায় চার মিনিটের ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলরাম রায় নিজ বাড়ির উঠানে চেয়ারে বসে নিয়োগপ্রার্থী শাহিনুর ইসলামের ৭৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন।

পাশে বসে আছেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য শাহজাহান আলী।  

এ সময় শাহজাহান আলী প্রধান শিক্ষককে ওই টাকা গুনে নিতে বলেন। গনা শেষে টাকা ঘরে রেখে আসেন বলরাম রায়। এরপর প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘৮ নিউক, আর ১০ নিউক, ভাই (অভিভাবক সদস্য শাহজাহান) কইছে, হেড মাস্টারের দুই থাকবে। বাকি টাকা যাহার নামে যাক, সেটা আমি দেখব না। ঝকঝকা সিল-স্বাক্ষর দিব। আমার হাতেই সব কাজ। আমার সিল-সই ছাড়া কোনো বিল হবে না। ’ 

শাহজাহান আলী এ সময় বলেন, ‘আপনাকে (প্রধান শিক্ষক) দেড় লাখ দেওয়া হবে। ’ তখন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আপনি তো (শাহজাহান) দুই দিতে চেয়েছেন। ’ শাহজাহান বলেন, ‘আমরা নিব না?’ 

জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘হোক তাহলে, তোমারটাই হইল। আমার দেড়। আমি শুধু কাগজপত্র ঠিক করে দিব। বাকিটা তোমরা সামলাবে। ’ 

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, এক অফিস সহায়ক পদের জন্য বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্যরা টাকা নেন। এরপর কৌশলে বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল মমিনের ভাতিজা শহিদুজ্জামানকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেন।  

বিষয়টি জানতে পেরে ৯ জন নিয়োগপ্রার্থী গত ৯ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানান।  

নিয়োগপ্রার্থী উপজেলার আউলিয়াগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুর ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ওই বিদ্যালয়ে পিয়ন পদের জন্য আবেদন করি। এরপর আমার কাছে ১৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। একপর্যায়ে নিয়োগের জন্য নয় লাখ টাকা চুক্তি হয়। আমি গরু বিক্রি করে দুই দফায় প্রধান শিক্ষককে দেড় লাখ টাকা দিয়েছি। শাহজাহান আলীসহ কমিটির অন্য সদস্যদের দিয়েছি ২০ হাজার করে টাকা। আমার নিয়োগের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এরপর জানতে পারি, বিদ্যালয়ের সভাপতির ভাতিজা শহিদুলকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ’

তবে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহজাহান আলী দাবি করেন, ‘ওই দিন প্রধান শিক্ষককে ফরম পূরণের ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেটা নিয়োগের কোনো টাকা নয়। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে, সেখানে নিয়োগও নিয়ে কথা হয়েছিল, কে কত টাকা দিতে চায়। ’ 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলরাম রায় বলেন, বিদ্যালয়ে এখনো অফিস সহায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এর আগেই কী থেকে কী হয়ে গেল। ’ ঘুষের টাকা গুনে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওইটা ঘুষের নয়, ফরম পূরণের টাকা। ’ 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের টাকা গুনে নেওয়ার একটি ভিডিও আমার হাতে এসেছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন, ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

news24bd.tv/আলী