বাফুফে ইচ্ছা করেই নারী দলকে মিয়ানমার পাঠায়নি: ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী 

সংগৃহীত ছবি

বাফুফে ইচ্ছা করেই নারী দলকে মিয়ানমার পাঠায়নি: ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী 

অনলাইন ডেস্ক

টাকার অভাবে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে যেতে পারেনি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। গত ২৮ মার্চ এক ভিডিও বার্তায় বাফুফের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানান ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। এরপর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এর দায় চাপান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ওপর। জানান, বরাদ্দ চেয়েও টাকা পাননি তারা।

আবু নাঈম সোহাগের পাঠানো বার্তায়ও জানানো হয়, ‘মন্ত্রণালয় থেকে টাকা না পাওয়ায় দলকে পাঠানো যাচ্ছে না’। এরপরই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

আজ (০৯ এপ্রিল) ক্রীড়া পরিষদে সাংবাদিকদের কাছে বাফুফের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘নাটক সাজানোর’ অভিযোগ তুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে দিয়েছেন তদন্তের ইঙ্গিতও।

বাফুফে ইচ্ছা করেই মেয়েদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বলে জানিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নারী ফুটবল দলকে অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠাতে পারার জন্য প্রাথমিকভাবে আমাদের দোষারোপ করা হয়েছে। তাদের দাবি, সরকার বা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয়নি এজন্য টিম পাঠাতে পারেনি। আমরা ২৭ মার্চ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়েছি। ’

‘কিন্তু সেখানে উল্লেখ ছিল ৩১ মার্চের মধ্যে তাদেরকে অবগত করানোর জন্য যে, ৯২ লাখ টাকা তাদের প্রয়োজন। এটা তারা অনুরোধ করেছেন। এক দিন পরই তারা জানালেন যে, টাকা পাচ্ছেন না বলে টিম পাঠাতে পারছেন না। কীভাবে এটা হয়? এক দিনের মধ্যে কোনো কিছু আবেদন করে পরদিনই দোষারোপ করে। এই ধরনের যে কাজটি তারা করেছেন আমি মনে করি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। ’

বাফুফে নিজেদের দোষ মন্ত্রণালয়ের কাঁধে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী, ‘নিজের দোষকে অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ার একটা হীন প্রচেষ্টা তারা করেছেন। তারা যে ভুল করেছে সেটার কিন্তু জাতি সমালোচনা করেছে। এত টাকার মধ্যে খরচটা আমি দেখেছি, ৩০-৪০ লাখ টাকা হলেও খেলায় অংশ নিতে পারত। সেটি যে কেউ দিতে পারত। এমনকি আমরাও দিতে পারতাম। আমরা দেওয়ার জন্য প্রস্তত ছিলাম। কিন্তু এ ধরনের টুর্নামেন্টে অংশ নিতে হলে নিশ্চয় তারা ৩ বা ৬ মাস আগে জানতে পেরেছে। তারা এতদিন পরে জানালেন কেন?’

বাফুফে ইচ্ছা করে নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমার পাঠায়নি বলেই মন্তব্য করেন জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যে হয়তো তাদের মধ্যে এমন কোনো কিছু ছিল যে, তাদের ইচ্ছাই ছিল যে নারী ফুটবল টিমকে পাঠাবে না বিদেশে। এই জন্যই এমন নাটক সাজিয়ে তাদের দোষটা আরেকজনের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’

বাফুফের বিরুদ্ধে তদন্তের ইঙ্গিত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যে অলিম্পিক বাছাইয়ে যেতে পারল না এটার মধ্যে কিছু একটা আছে। যেটি আমাদের পক্ষ থেকেও বিষয়টা খতিয়ে দেখছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি অবগত করেছি। কেন এত তড়িঘড়ি করে চিঠিটি দিলেন, কেন তারা তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন সময়ের আগে। আমি যদি ধরেই নিই যে ৩১ মার্চের মধ্যে পাঠাতে হবে তাহলে দুই দিন আগে কেন সাংবাদিক সম্মেলন করলেন? এটাও বাদ দিলাম, যেকোনো সংস্থার কাছে টাকা চাইতে হলে একটু সময় লাগে, সময় দিতে হবে তাদের। ’

‘আমাদের কাছে টাকা চাওয়ার পর কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে চিঠি লিখেছি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই অর্থের বিষয়ে। সেটির জবাব আসার আগেই তারা এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি নারী খেলোয়াড়দের উন্নয়নে যে ধরনের অবদান রেখেছেন- এর আগে উনাকেও যদি আমরা অবগত করতাম তাহলেও কিন্তু হতো। ’

নারী ফুটবল দলকে টাকার অভাবে মিয়ানমার পাঠাতে না পারা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। দেশের দুই শীর্ষ ফেডারেশন বাফুফে ও বিসিবির মধ্যে কথার যুদ্ধ গড়িয়েছে অনেক দূর। বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে খোঁচা মেরেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। তার জবাবে সালাউদ্দিনকেও একহাত নিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি।

দুই শীর্ষ ফেডারেশন প্রধানের এভাবে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ানো নিয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি অত্যন্ত সম্মানিত মানুষ, আমাদের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। খেলাধুলায় তার অবদান অবশ্যই অবিস্মরণীয়। খেলাধুলার জগতে তার অবদানকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু উনি ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিকে নিয়ে যে কথাটি বলেছেন তা অশোভনীয় বক্তব্য। ’

‘যে কেউ এটা কিন্তু মানতে পারে না। তিনিও (নাজমুল হাসান পাপন) সম্মানিত মানুষ, সংসদ সদস্য ছাড়াও ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। আবার সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াপ্রেমী একজন মানুষ, তিনি খেলাধুলাকে এত ভালোবাসেন। তিনি নিজে সবসময় খেলাধুলার খবর নেন, নিজে টেলিভিশনে খেলাধুলা দেখেন। যখন সময় পান মাঠে চলে আসেন। এটা কিন্তু জন্মগতভাবে ওনার মধ্যে এসেছে। ওনার পরিবার খেলাধুলা জগতের মানুষ। এ ধরনের একটি কথা বলা, এটাকে কোনোভাবেই আমি মানতে পারছি না। এ ধরনের কথা এড়িয়ে চলা উচিত। বুঝতে হবে কোন কথাটি বলা উচিত। আমাদের মতো মানুষের কাছে অন্যরা শিখবে। আমরা এমন কোনো কথা বলবো না, যে কথা শুনে মানুষ বিভ্রান্ত হবে, মনে কষ্ট পাবে। ’