কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামে গতকাল থেকে সবকটি নদনদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। বিশেষ করে দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে  সবগুলো নদনদীর পানি বেড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। গত তিনদিন ধরে নদনদীর পানি দ্রুতগতিতে বেড়েই চলেছে।

 

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়ে দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সে.মি ওপর দিয়ে, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সে.মি ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর সেতু পয়েন্টে ২৩ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানি দুপুরের দিকে বিপৎসীমার অনেকটা নিচ দিয়ে বইছিল। এ দুটি নদীর পানি বেশি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে। এছাড়াও তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও হুহু করে বেড়ে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে বইছে।

 ফলে নদনদীর তীবরর্তী প্রায় শতাধিক চর ও দ্বীপচরের বাড়িঘরে পানি প্রবেশসহ পানি উঠে নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে পানি উঠায় চলাচলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এসব মানুষকে। এসব এলাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের বেশ মারাত্মক কষ্টে পানিতে দিন পার করতে হচ্ছে। দুধকুমার নদীর চরে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গিয়ে চরাঞ্চলের অনেক বাড়ির আঙিনায় পানি প্রবেশ করেছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামের গৃহবধূ শাপলার বাড়ীতে দেখা যায়, স্বামী বাবুল আলী এক সন্তানকে কোলে নিয়ে আছেন। অপর সন্তানটি তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরে পানি প্রবেশ করায় রয়েছেন বিপাকে। পানি বেড়ে পরিবারটিতে এখন দুর্দশা দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ ভগবতীপুর গ্রামের গৃহবধু নার্গিস জানান, চারদিন থেকে পানিবন্দী হয়ে আছি। কেউ খোঁজখবর নিতেছেন না। ঘরের চৌকি পর্যন্ত বন্যার পানি উঠেছে। উঁচু বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন এসব মানুষের অনেকেই। নুনখাওয়া ইউনিয়নের চর কাফনা গ্রামের নুর বখত জানান, গতকাল থেকে পানি এতজোরে বাড়ছে যা কল্পনা করতে পারছিনা। এসব স্থানের নীচু এলাকার বাড়ীঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শুক্রবার দিনভর যেভাবে নদনদীর পানি বাড়ে এতে সবগুলো নদনদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

আরো জানা যায়, দুধকুমার নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির কারনে এর নদী তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সংস্কারকৃত রাস্তার দুইদিকে তলিয়ে গিয়ে সেখানকার লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই পানি বৃদ্ধির অবস্থা ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তারপর পানি নেমে যাবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন বাঁধ বন্যায় ডুবে যায়নি বলে দাবি করে তিনি জানান, নাগেশ্বরী উপজেলায় একটি সড়ক সংস্কারের কাজ করেছে পাউবো। সেটির দুটি অংশ প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।