সন্তানের সঙ্গেও করছি ব্যবসা!

সন্তানের সঙ্গেও করছি ব্যবসা!

Other

বাবা-মা যখন টাকা বানানোর মেশিন, তখন সন্তান মানুষ হবে কীভাবে? যারা কাল থেকে ধর্ষণের এই সংবাদটি নিয়ে কিছু লিখতে বলছেন, তাদের বলি, কি হবে এসব নিয়ে কথা বলে? আমরাই কি দায়ী না সমাজের এসব অস্থিরতা তৈরির জন্য? 

আমাদের সাধ্য যা, তারচেয়েও তিনগুন বেশি খরচ করছি বাচ্চাদের পেছনে! ফলে বাবা-মা ছুটছেন টাকার পেছনে কেবল, টাকার মেশিন হয়ে গেলে বাবা-মা হওয়া যায়? ছেলে-মেয়েকে কেবল দেশের নামী এবং দামী স্কুলে পাঠালেই হবে, মানুষ বানানোর দায় নেই? একটা ছেলে কিভাবে বেড়ে উঠছে, তার মনোজগতের সাথে মায়ের কোনো সম্পর্ক তৈরী হয় না! একজন শিক্ষিত মা জানেনই না, তার ছেলে একজন পুরোপুরি ধর্ষক হয়ে বেড়ে উঠছে ঘরের ভেতরে বসেই! বাবা-মা দুজনেই ছুটছেন হয় টাকা বানাতে অথবা টাকা খরচ করতে!

আরও পড়ুন: সরকার কারা ডুবায় কীভাবে ডুবায়

মরদেহ পোড়ানোকালে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ল ছাদ, নিহত ১৯

আরও পড়ুন: ধর্ষকের গোপনাঙ্গ কাটার আইন চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে তিনি

ওরা আমার বুক, গোপনাঙ্গ পুড়িয়ে দিয়েছে : সৌদি ফেরত তরুণী

মা-সন্তানের বন্ধন কি টাকা দিয়ে কেনা যায়? সেটা কিনতে হয় গুনগত সময় দিয়ে। লোকমা দিয়ে ভাত মুখে তুলে দেয়াকে কোয়ালিটেটিভ সময় বলে না! গুনগত সময় হলো, সন্তানের সাথে গল্প করা, তাদের গল্পগুলো শোনা, সারাদিন স্কুলে কি করলো, কার কার সাথে মিশে, ইত্যাদি গল্প করে জানা। তার মনোজগতে একটা মানবিক চৈতন্য গড়ে তোলা! তাকে মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা, তাকে জীবনের গল্প বলা, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনবোধকে কাছ থেকে দেখানো, তার মনোজগতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা! বাবা'রা তো আরো দূরে, যেন টাকা উৎপাদন করাই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য! কেননা, পরিবারের যে ব্যয় বেড়েছে, তা তাকেই উপার্জন করতে হবে! কেন, ব্যয়কে কি সংবরণ করা যায় না? আমাদের বাবা মায়েরা এতো অল্প আয়ের মাঝে পারলে আমরা কেন পারব না? 

শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন ফিস আর স্কুলের মোটা অংকের ফিস দিয়েই যদি সন্তান মানুষ হয়ে যেতো, তাহলে যারা আজ সমাজে আদর্শ মানুষ তাদের মা বাবার টাকার পাহাড় থাকতো, ব্র্যান্ডের গাড়ি থাকতো, বাড়ি থাকতো! তাদের কাছে এসবের মূল্য ছিলো না, ছিল কেবল সন্তানের মূল্য! আর আজ আমরা এমন সমাজ তৈরী করেছি, যেখানে ভালো সন্তান তৈরী করার বদলে প্রতিদিন নতুন জামা, শাড়ি, ব্র্যান্ডের শার্ট, ঘড়ি, বাড়ি, গাড়ি, এসবই আমাদের মূল আগ্রহের জায়গা! 

আমরা ছুটছি এসব বিলাস বহুল দ্রব্যের পেছনে, কে কত দেখাতে পারি! 

আমরা ভাবছি, টাকা আয় করি আর ব্যয় করি, এতেই সকল সুখ! কিন্তু এই সুখ যে সুখ নয় একবার ঐশী বুঝিয়েছিল, আজ আবারও প্রমাণিত হলো! এর মাঝে অনেক ঘটনা ঘটেছে, সব হয়তো গণমাধ্যমে আসেও না। এইরকম আরো সংবাদ আসবে ঘরে ঘরে, যেভাবে মোবাইলে আসক্ত হচ্ছে আমাদের বাচ্চারা! আরো কত আসক্তি তৈরী হবে বাচ্চাদের ভেতরে খোঁজ পাবেন না এই মা বাবারা তাদের টাকা বানানোর নেশার ভিড়ে! এসব খবর আসতে বাধ্য করছেন বাবা মায়েরাই, যাদের কাছে ছেলে-মেয়ে কোন স্কুলে পড়ছে, কোন ব্র্যান্ডের গাড়ি, কাপড়, ঘড়ি কিনছে সেগুলোই স্ট্যাটাস সিম্বলের মূল ইন্ডিকেটর! 

সন্তান যা চায়, তাই কিনে দেয়াটাকেই অনেক বাবা মা মনে করেন এটাই আদর, ভালোবাসা! কি তুচ্ছ, কি কৌশলী, কি স্বার্থপর আমরা আজকাল! সন্তানের সাথেও করছি ব্যবসা! তাদেরকে গুনগত সময় দিচ্ছি না, তাদের সাথে খেলি না, হাসা-হাসি করিনা, মাসে একটা সিনেমা দেখিনা একসাথে বসে, একটা গল্পের বই নিয়ে আলাপ করি না, তাদের সাথে আড্ডা দেই না, বিনিময়ে টাকা বা পণ্য দিচ্ছি, কারণ আমরা তো টাকা উপার্জনে ব্যস্ত, টাকা বানানোর মেশিন হয়েছি! মানুষ হওয়া, মানবিক হওয়ার গল্প যাদের কানে কোনোদিন পৌঁছেনি, তারা কি করে মানবিক হবে!!? সেটা আমরা আশা করি কীভাবে?

রাশেদা রওনক খান : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ঢাকা।

news24bd.tv তৌহিদ