টিকটক শব্দটি এখন বাবা মায়ের কাছে আতঙ্ক

টিকটক শব্দটি এখন বাবা মায়ের কাছে আতঙ্ক

Other

ক'দিন আগে সামাজিক মাধ্যমে এক নারী নির্যাতনের ভাইরাল দৃশ্য দেখে সবাই আতঙ্কিত হচ্ছে। ঘটনার সন্ধানে জানা যায় ভয়ংকর এ ঘটনার অন্তরালে ছিল একটা শব্দ "টিকটক"। টিকটকের নেশাতে কতটা নারকীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা অপরাধীরা হয়তো চিন্তাও করতে পারেনি। পুলিশের অনুসন্ধান ও আইনের বিচারে এ ঘটনার সত্য প্রকাশিত হোক একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটাই কাম্য।

এ ঘটনার রেশ ধরে পারিবারিকভাবে সন্তানের দায়িত্ব পালন নিয়ে পিতামাতা ও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।  

আসলে সময়ের সাথে সাথে পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ম কানুন, রীতিনীতি অনুযায়ী সন্তান লালনপালনের চিন্তাভাবনা ও পালটে যাচ্ছে ক্রমশ। আজকাল আধুনিকতা ও স্বাধীনতার নামে স্কুল কলেজগামী ছেলেমেয়েরা যে ধরনের চলাফেরা করে তা সমাজের জন্য যে কল্যাণকর নয় তার প্রমান কিশোর গ্যাং, সামাজিকমাধ্যমের অপব্যবহার কিংবা জনপ্রিয়তার লোভের টিকটক কর্মকাণ্ড। প্রযুক্তির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে মানুষকে এগিয়ে যেতে হবে এটা যেমন সত্যি,তেমনিভাবে নিয়মনীতি  মেনে পরিশীলিতভাবে জীবন পরিচালনা করাটাই হলো আধুনিকতা।

এ বোধটা সন্তানকে দিতে হবে পরিবার থেকে। বর্তমান সময়ে দেখা যায় ব্যস্তজীবনের দোহাই দিয়ে বাবা মা সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে পারে না। সন্তানরা পরিবার, আত্নীয় পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এককভাবে বড় হয়। তাদের সংগী হয় মোবাইল আর ইন্টারনেটের জগত। কোন বাচ্চা ব্যস্ত হয় গেমস নিয়ে, কোন বাচ্চা বন্ধুত্বের নামে সম্পর্ক গড়ে তুলে আবেগের বশে বিপথে চলে। আবার কেউ ফ্যান্টাসিতে করছে টিকটক। পরিবারের পারস্পরিক বন্ধনের দূরত্ব কোনদিন যন্ত্র দিয়ে ঘুচানো যায় না এটা বুঝতে হবে পরিবার ও সমাজকে।  

সন্তান যখন বিপথে যায় তখন মনে হয় তার হাতে আদর ভালোবাসার নামে দামি মোবাইল তুলে দিয়ে কতটা ভুল করেছে। তাই সন্তানকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেবার  সাথে সাথে সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। তা না হলে প্রতিটি মুহুর্তে সামাজিক মাধ্যম, টিকটক বা আর কিছু নিয়ে আতঙ্কতে ভুগতে হবে পরিবার ও সমাজকে।

আরও পড়ুন


এবার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় হিরো আলমের বিরহের গান (ভিডিও)

টিকটকারদের ভয়ংকর ফাঁদ, কয়েকশ জনকে খুঁজছে পুলিশ

মা হচ্ছেন নুসরাত, নিজের নয় বলে মন্তব্য স্বামীর!

পাপারাজ্জি থেকে বাঁচতে মেয়েকে বুকে চেপে ধরলেন আনুশকা


একটা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজ। আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ প্রভাব ফেলে তাদের মাঝে। অনেকে বন্ধুদের সমতালে চলতে গিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটাতে সহজ রাস্তা হিসাবে বেছে নেয় অনৈতিক কার্যক্রমকে। অথবা ইন্টারনেটের ব্যবহার করে অচেনা জগতে হারিয়ে গিয়ে বন্ধুত্বের নামে ভুল পথে চলে। আর সে ভুল পরিবেশে ডুবে থাকে রাত দিন। যার ফলে কাছের মানুষের চেয়ে সে অচেনা জগতের মানুষকে অনেক বেশি আপন মনে করে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে আমার আপনার সন্তানরা।

প্রতিটি পরিবার আজকাল চিন্তিত তাদের সন্তানদের আচার আচরণ নিয়ে। কোন অনুষ্ঠানে গেলে দেখা যায়, বাচ্চারা আনন্দ করার চেয়ে ব্যস্ত থাকে মোবাইল নিয়ে। টিকটকের অমুক ভাই তমুক ভাই হয় তাদের আলোচনা বিষয়। দেশের ইতিহাস সংস্কৃতি ঐতিহ্য নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। কারণ এখন আর স্কুল কলেজ পাড়া মহল্লায় সেভাবে সাহিত্য সংস্কৃতির অনুষ্ঠান আয়োজন হয় না। বইয়ের মুখস্থ বিদ্যার বাইরে যে একটা জগত আছে তার চর্চা আজকাল তেমনভাবে হয় না।

সন্তান কেন বদলে যাচ্ছে, সে কেন টিকটক করে তা নিয়ে সবার আগে চিন্তা করতে হবে পরিবারকে। একটা দামি মোবাইল সন্তানকে ভালোবেসে উপহার দেবার আগে ; তাকে বুঝাতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহার একটা মাত্রা থাকে বয়সের ব্যবধানে। সবার জন্য সব কিছু প্রযোজ্য নয়। ঠিক একইভাবে সন্তানের বন্ধু হয়ে খোঁজ রাখতে হবে তার চেনা জানার জগতকে। সে মিথ্যা বললে কেন বলছে তা জানতে হবে।  

কথায় আছে, ' শাসন করা তারেই সাজে, সোহাগ করে যে'। অতিমাত্রায় শাসন করলে সন্তানের সাথে যেমন দূরত্ব বাড়ে, তেমনিভাবে অতিরিক্ত ভালোবাসাতে ও সে প্রশ্রয় পেয়ে যায়। আর এর ফলে সন্তান নিজের মত যা খুশি করার সুযোগ নিয়ে দূরে সরে যায় বাবা মা হতে। সুতরাং সন্তানের প্রতি নিজের দায়িত্বটাকে যথাযথ পালনের চেষ্টা করতে হবে সবার আগে। ব্যস্ততার অজুহাতে সন্তানকে যন্ত্র নির্ভর জীবন দিলে তা কোনদিনই হিতকর হবে না।  

আজকের তরুণ সমাজ আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের জীবন থেকে ভুলগুলো শুধরে দিতে হলে বাবা মাকেই সবার আগে বন্ধু হতে হবে। তাদের চলাফেরায় বাস্তব চিত্রকে বুঝাতে হবে। উঠন্ত বয়সের ফ্যান্টাসি জীবনে যে বির্পযয় ডেকে আনে তা শিখাতে হবে সঠিক সময়ে। তা না হলে এ সমাজে টিকটক, গেমস সহ অন্যান্য নেশার প্রবনতা বাড়বে বৈ কমবে না।

হাসিনা আকতার নিগার: লেখক - কলামিস্ট 

news24bd.tv / কামরুল