সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

আজ ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ২৬তম বছরে পদার্পণ করলো।  

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক পুনর্বাসন ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামকে তৎকালীন আইপিজিএমঅ্যান্ডআর এর উন্নয়নের সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব তৎকালীন আইপিজিএমঅ্যান্ডআর এ ভর্তি ছিলেন।

অধ্যাপক ডা. শেখ আশরাফ আলীর তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বেগম মুজিব ভর্তি থাকার সুবাদে সে সময়ে বঙ্গবন্ধু এখানে আগমন করেন। আর এ সুযোগে চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা প্রবর্তন এবং দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির জন্য আইপিজিএমঅ্যান্ডআর কে আরও উন্নত এবং বিসিপিএস প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেন। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম পাবলিক মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ আন্তর্জাতিক মান অর্জন করে দেশের আপামর জনসাধারণের সুচিকিৎসায় নিয়োজিত হবে- এ আকাক্ষা নিয়ে যে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল- আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, জাতির পিতার নামে এ বিশ্ববিদ্যালয় সেবার তালিকায় বিশ্বসেরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

স্পেনের সিমাগো এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস এ দুটো বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা মানসম্মত চিকিৎসা এবং গবেষণার জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ পঞ্চম স্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানের মর্যাদা দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০৫টি পোস্টগ্রাজুয়েট কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। অন্যান্য ৪১টি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬২টি রেসিডেন্সি কোর্স রয়েছে। চালু হয়েছে এমএসসি নার্সিং কোর্স। বাংলাদেশের ছাত্রদের বাইরেও ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, সোমালিয়া, কানাডা, ইয়েমেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১১টি দেশের প্রায় ৩৫০ বিদেশী শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোর্সে লেখাপড়া করছেন।  

প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ৮ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এখন বিভিন্ন ইউনিটসহ ৫৭টি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ। আরও সুশৃঙ্খল এবং ডিজিটাল করা হয়েছে আর্থিক ব্যবস্থাপনা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশের সব মানুষের কাছে পরিগণিত হয়েছে চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য আস্থার স্থল হিসেবে।

রোগীদেরকে আরও উন্নত চিকিৎসা প্রদান করার লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যেই চালু করেছি ভিট্রিও রেটিনা, গ্লুকোমা, কর্নিয়া, অকুলোপ্লাস্টি, ক্যাটারেক্ট ও রিফ্রেকটিভ সার্জারি, অথোস্কোপিক ও অথোপ্লাস্টি, হ্যান্ড অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি, শিশু অ্যান্ডোক্রাইনোলজি, জেনারেল রিউম্যাটোলজি, ইমিউনো রিউম্যাটোলজি, ইলেক্ট্রোকার্ডিওলজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, এডাল্ট কনজিনিটাল হার্ট ডিজিজসহ ১৫টি ডিভিশন। এছাড়াও সার্জিক্যাল অনকোলজি, কলোরেক্টাল সার্জারি, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড প্যানক্রিয়েটিক সার্জারি, গাইনোকলোজিক্যাল অনকোলজি, রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি, ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ নামে আরও ৭টি বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনুমোদিত হয়েছে নতুন শিশু অনুষদ।

মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থায় গবেষণাকে জোরদার করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় করোনা মহামারিতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এবং বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ও কোরিয়া সরকারের যৌথ অর্থায়নে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। ফলে, দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে কম খরচে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও দেশে প্রথমবারের  মতো ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। লিভারসহ অন্যান্য অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমও এগিয়ে যাচ্ছে সমন্তরালভাবে।  

আগামী পঞ্চাশ বছরের পরিকল্পনা বিবেচনায় রেখে একটি মাস্টার প্ল্যান নিয়ে চলছে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম। অচিরেই যুক্ত হতে চলেছে ইমার্জেন্সি সার্ভিস, ওয়ান পয়েন্ট চেকআপ সেন্টার, ডে কেয়ার সেন্টার, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন, ই-টিকেটিং, সর্বক্ষেত্রে স্মার্ট পদ্ধতি। কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করি। তারপরও সকল শিক্ষক, ছাত্র, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম, সেবা কার্যক্রম, গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে সফলতা নিয়ে।

লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।