যে দেশে একটিও মশা নেই!

যে দেশে একটিও মশা নেই!

ডেঙ্গু রোগ ছড়ানো এডিস মশার দাপট বেড়েছে। মশাবাহিত রোগের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার প্রচার চলছে। দেশের মানুষ যখন এডিস আতঙ্কে আছে, তখন জানা গেল একটি দেশের খবর। যে দেশে একটিও মশা নেই! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি।

 এই দেশে শুধু মশাই নয়, এখানে কোনও পোকামাকড় বা সাপখোপও নেই। দেশটির নাম আইসল্যান্ড। এটি একটি মশাবিহীন দেশ। মশা বা পোকামাকড় সম্পর্কে এই দেশের লোকজনের এরকম কোনো ধারণাই নেই।
চলুন জেনে নেই মশা বিহীন দেশটি সম্পর্কে।

মশাবিহীন এই দেশটি হলো উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত আইসল্যান্ড। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের মতে, এই বিক্ষিপ্ত জনসংখ্যার দেশটিতে প্রায় ১৩০০ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, অথচ একটি মশার চিহ্নও নেই সেখানে। যদিও এর প্রতিবেশি রাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ডেনমার্কের মতো দেশগুলোতে প্রচুর মশা দেখতে পাবেন। কিন্তু আইসল্যান্ডে মশার অনুপস্থিতি অনেক গবেষকদের কাছেই একটি আকর্ষণীয় বিষয়।

আইসল্যান্ড দেশটি মশাবিহীন হওয়ায় বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেছে। বলা হয় যে, মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অগভীর জলাশয় কিংবা জমা স্থির পানির প্রয়োজন হয়, সেখানে মশা ডিম পাড়ে এবং সেই ডিম থেকে জন্মায় লার্ভা। এই মশার লার্ভা জন্মানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে জমে থাকা পানির প্রয়োজন হয়। মশার জীবনচক্র পরিপূররণের জন্য আইসল্যান্ডে কোনও স্থির জলাশয় নেই। ফলে সেদেশে মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারবে না।

মশা না থাকার আরেকটি কারণ হল আইসল্যান্ডের তাপমাত্রা খুবই কম। এমনকি এখানে কখনও কখনও তাপমাত্রা মাইনাস ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছায়। এখানে পানি অতি দ্রুত জমে যায়। এই এখানে কারণে মশার উৎপাতও অসম্ভব। আরেকটি কারণ হতে পারে যে, আইসল্যান্ডের পানি, মাটি এবং সাধারণ বাস্তুতন্ত্রের সংমিশ্রণ মশাদের জন্মের জন্য সহায়ক নয়।

মশা নেই কেন:
আইসল্যান্ডে কোনো মশা নেই কেন– এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বেরও উদ্ভাবন ঘটেনি, কিংবা এটি এমন কোনো রহস্যময় ঘটনাও নয়, যার রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি। দেশটিতে কেন মশা নেই– এর পেছনে দুটো ব্যাখ্যা রয়েছে। একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, আইসল্যান্ডের আবহাওয়া এত বেশি প্রতিকূল যে মশার টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই সেখানে। মশার বংশবৃদ্ধির জন্য কিছুটা উষ্ণতার প্রয়োজন হয়। এজন্য আমরা দেখতে পাই, যেসব দেশের আবহাওয়ায় উষ্ণতা যত বেশি, সেসব দেশে মশার উৎপাত বেশি, মশাবাহিত রোগের সংক্রমণও বেশি। আফ্রিকা যেহেতু পৃথিবীর উষ্ণতম মহাদেশগুলোর একটি, তাই এই মহাদেশের সহায়ক আবহাওয়ায় মশার বংশবৃদ্ধি খুব বেশি হয়। মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপও বেশি দেখা দেয় এই মহাদেশে। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এখানে বছরে তিনবার ভয়াবহ শীত নেমে আসে। শীতল আবহাওয়া যেহেতু মশার বংশবৃদ্ধির পক্ষে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে, তাই দেশটির বিরূপ আবহাওয়ায় মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে না।

আইসল্যান্ডে এত বেশি শীত পড়ে যে, সেখানে মশার প্রজননের কোনো সম্ভাবনা নেই

এবার দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক। মশার বংশবৃদ্ধির জন্য জলাশয় দরকার হয়। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, আইসল্যান্ডের জলাশয়গুলোতে রাসায়নিক পদার্থের যে অনুপাত রয়েছে, সেটি মশার বংশবৃদ্ধি দারুণ কঠিন করে তোলে। এর পাশাপাশি বদ্ধ জলাশয়ের দরকার হয়, যেখানে স্রোত নেই। মশার ডিম থেকে লার্ভা, এরপর লার্ভা থেকে মূককীট, মূককীট থেকে পরিণত বাচ্চা– এই চক্রের জন্য সময় ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পাশাপাশি স্রোতহীন জলাশয়ের প্রয়োজন হয়। আইসল্যান্ডে স্রোতহীন বদ্ধ জলাশয়ের বেশ অভাব রয়েছে, তাই মশার বংশবৃদ্ধির পক্ষে কোনো যৌক্তিক কারণ খোঁজার অবকাশ নেই এই দেশে। এছাড়া প্রথম ব্যাখ্যা অনুযায়ী- যেহেতু দেশটিতে বছরে তিনবার ভয়াবহ শীত নেমে আসে, তাই জলাশয়গুলোর পানি তিনবার বরফে পরিণত হয়। ফলে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার যে চক্র, সেটি ব্যাহত হয়। এভাবে চরম প্রতিকূল পরিবেশে যে মশার বংশবৃদ্ধি হওয়া সম্ভব নয়, সেটি সহজেই অনুমেয়।

এবার মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে, আইসল্যান্ডে প্রচন্ড শীতের কারণে যেহেতু মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না, তাহলে ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলোতে কীভাবে মশার অস্ত্বিত্ব আছে? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের খুব বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আইসল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী দেশ গ্রিনল্যান্ডের দিকে তাকালেই চলবে। গ্রিনল্যান্ডের ক্ষেত্রে বলা যায়, যখন শীতকাল শুরু হয় দেশটিতে, তখন মশা শীতনিদ্রায় চলে যায়। এরপর যখন শীত শেষে বরফ গলা শুরু হয়, তখন মশা ডিম পাড়তে শুরু করে। আইসল্যান্ডের মতো এখানে শীত শেষ হওয়ার পর আবার হঠাৎ শীত নেমে আসে না, মোটামুটি ঋতুচক্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী দেশ আইসল্যান্ডের তুলনায় উষ্ণতা বিরাজ করে। তাই এই দেশে মশা নিজের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর চক্র পূর্ণ হতে যে সময় দরকার, সেটি পেয়ে থাকে। এজন্য পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসেবে আইসল্যান্ডে মশার বংশবৃদ্ধি না ঘটলেও ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য শীতপ্রধান দেশে মশার বংশবৃদ্ধি ঠিকই ঘটতে থাকে।

মশা ছাড়াও এখানে সাপ এবং অন্যান্য কোনও পোকামাকড় চোখে পড়বে না। আসলে এখানকার জলবায়ু এই সব সরীসৃপ বা কীটপতঙ্গ জন্মের পক্ষে অনুকূল নয়। যদিও এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে মিজ পোকা দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলো দেখতে হুবহু মশার মতো এবং সেগুলো কামড়ায়। তবে মশার মতো এরা অতটা আক্রমণাত্মক নয়। মশা জামা কাপড়ের উপর দিয়েও কামড়ায়। মিজ অবশ্য শুধু ত্বকের উপরে হামলা করে।

News24bd.tv/aa