মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কি?

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কি?

শরিফুল হাসান

গত ১০ বছরে বহুজনকে বহুবার আমি কথাটা বলেছি। অনেক নীতি নির্ধারককে বলেছি। টেলিভিশনেও বলেছি। দেখেন এই দেশের লাখ লাখ ছেলেমেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে।

তাদের ভবিষ্যত কী? এই যে মাদ্রাসায় লাখ লাখ ছেলেমেয়ে পড়ে তারা কী সবাই নিজের ইচ্ছায় পড়ে? লেখাপড়া শেষ করে কোথায় চাকুরি করবে তারা ? তাদের কর্মসংস্থানের জন্য কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? কেন মাদ্রাসায় এতো ছেলেমেয়ে নিপীড়ন নির্যাতনের পরেও আমরা চুপ? কেন আমরা তাদের কথা ভাবি না? 

দেখেন, আমি দেখেছি মাদ্রাসায় পড়া অনেক মেধাবী তরুণ রয়েছে। কাজেই তাদের কথা আমাদের ভাবতে হবে। আমার প্রস্তাব হলো এই দেশের মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদের বেশিরভাগই আরবিটা মুখস্থ করে, তারা আরবিটা পড়তে পারে, অনেকে  লিখতেও পারেন। আরবিতে পুরোপুরি বুঝে নিজের মনের মত করে বলতে বা লিখতে পারে কতজন তা নিয়ে আমার সন্দেহ থাকলেও এই যে আরবিটা তারা পড়তে পারেন, লিখতে পারেন সেটাও কিন্তু একটা বিরাট শক্তি।

এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।  

প্রশ্ন হলো কীভাবে কাজে লাগাবেন? দেখেন বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি প্রবাসী কর্মী বিদেশে থাকেন। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। এরা কিন্তু আরবিটা লিখতে পারেন না। পড়তেও সেভাবে পারেন না। কেউ কেউ থাকতে থাকতে বলতে পারেন। অথচ আরবে থাকা যে কোন বিদেশি যদি আরবি ভাষাটা জানেন এক্ষেত্রে তিনি অন্য যে কারও চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।  

এখন ধরেন আমরা যদি পরিকল্পনা করি আগামী ১০ বছরে আমাদের মাদ্রাসায় পড়া তরুণদের আমরা প্রশিক্ষিত কর্মী বানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাবো তাহলে কেমন হয়? ধরেন আরবি জানা ছেলেমেয়েদের আমরা নির্মাণ শ্রমিক, ড্রাইভার, সেবাকর্মী, রেস্টুরেন্ট কর্মীসহ নানা কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠালাম। যেহেতু তারা আরবি জানে, পড়তে পারে, লিখতে পারে আমরা যদি এখন তাদের ভাষাটা আরেকটু ঝালাই করে দেখবেন মাদ্রাসায় পড়া লাখ লাখ ছেলেমেয়েদর ভবিষ্যত বদলে যাবে। তখন আর তাদের শুধু ওয়াজ করে বা মিলাদ পড়ানোর অপেক্ষায় থাকতে হবে না। এর বদলে তারা দারুণ সব কাজ পাবে।  

আপনাদের একটু ধারণা দেই। আমার যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে অনেকবার অনেক কাজে যেতে হয়েছে সেক্ষেত্রে আমি দেখেছি আরবি জানা লোকগুলো বিশেষ সুবিধা পায়। শুধু কাতারেই আমি দেখেছি অনেক ইমাম-মুয়াজ্জিন বাংলাদেশের। তাদের বেতন লাখ টাকার ওপরে। এই সুযোগ কেন আমরা তাহলে কাজে লাগাচ্ছি না। কেন আমরা আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষাকে দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত করছি না?


আরও পড়ুন: এটাই আমাদের সৌভাগ্য: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার খবর শুনে বাবুনগরী


আমি শুধু একটা জিনিসই বলতে পারি, এই দেশে ইংরেজি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা এভাবে আলাদা আলাদা করে দেশ সমানতালে আগাবে না। এই যে আমাদের মাদ্রাসার অনেক ছেলেমেয়ে সঠিক তথ্য জানে না, তাদের অনেকেই নিপীড়নের শিকার হয় কেন হয়? আমরা অনেকেই মাদ্রাসা হিসেবে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখি। কিন্তু আমি মনে করি এই দেশকে ঠিক পথে নিতে হলে তাদেরও মূল ধারায় আনতে হবে। কর্মমুখি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের জন্য আমাদের আরবি জানা ছেলেমেয়েরা হতে পারে বিরাট মানবসম্পদ। এমনকি কর্মমুখী শিক্ষা থাকলে দেশেও তারা বহুকিছু করতে পারবে।  

আমাদের নীতি নির্ধারকদের বলবো, বিষয়গুলো ভাবেন। কেন মাদ্রাসাগুলো পিছিয়ে আছে, কেন তারা সঠিক তথ্য পাচ্ছে না সেদিকে আমাদের নজর দিতেই হবে। আশা করছি আমাদের নীতি নির্ধারকরা ভাববেন। আর মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলবো।  

মনে রাখবেন কোরআনের প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দ ইকরা মানে পড়ো মানে জ্ঞান চর্চা করো। আমি মনে করি জ্ঞানচর্চা থেকে সরে যাওয়াটাই আজকের ইসলামের মূল সংকট। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জ্ঞান চর্চার সুযোগ দিন। সবাইকে আসসালামু আলাইকুম।

শরিফুল হাসান, উন্নয়ন কর্মী।

news24bd.tv আহমেদ