যার যে টিকা পছন্দ, তা নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত। একটিই যদি টিকা বানানো হতো, তাহলে পছন্দ করার কিছু থাকতো না। যেহেতু কয়েকটি আছে, কয়েকটির মধ্যে একটিকে বেছে তো নিতেই পারি। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন নিশ্চয়ই ভালো একটি টিকা।
কিন্তু এর ট্রায়াল পর্ব এখনও সমাপ্ত হয়নি। ট্রায়াল পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর, কার্যকারিতা পরীক্ষা করার পর তারপর যদি একে নিই, তবে মনে খুঁতখুঁত থাকবে না। আস্ট্রোজেনেকার কোভিশিল্ড একশ ভাগ কাজ করবে না। কিন্তু তারপরও ট্রায়ালের ফল দেখে বলা যায় ষাট থেকে নব্বই ভাগ কাজ করবে।বিশ্বের ৭.৮ বিলিয়ন লোকের জন্য টিকা চাই। এ তো সোজা কথা নয়। টিকার অভাব থেকে থেকে দেখা দেবেই। এক বছরের মধ্যে দ্রুত টিকা বানানো হয়েছে। কিন্তু দ্রুত টিকা উৎপাদন , দ্রুত সবাইকে দেওয়ার কাজ চললেও সবাই পেতে পেতে ক'বছর লাগে কে জানে।
বিশ্বময় কোনও কিছু ঘটতে এই প্রথম দেখছি। অন্য কোনও গ্রহ থেকে কোনও দুষ্ট এলিয়েন এসে আমদের গ্রহের সবাইকে যদি খেতে শুরু করতো, তাহলে সেই এলিয়েনের হাত থেকে বাঁচার জন্য সারা বিশ্ব এক হয়ে যেভাবে কাজ করতো, মনে হয়েছে সেভাবেই এই প্যান্ডেমিকের সময় এক হয়েছে বিশ্বের মানুষ। তারপরও মানুষ তো, এই ভাইরাসকেও, এই রোগকেও, এর টিকাকেও রাজনীতির ঘোলা জলে গুলেছে। অনেকেই বড় গলায় বলছে, তারা মাস্ক পরবে না, তারা টিকা নেবে না। সরকারও বলে দিয়েছে, টিকা যদি না নিতে চায় কেউ, নেবে না। কেউ কেউ আবার বলে গোটা ভাইরাসের ঘটনাই নাকি ফেক নিউজ, টিকাও নাকি ফেক টিকা। জানি না ২০ লাখ মানুষের মৃত্যুকেও তারা ফেক মৃত্যু বলে কিনা।
অবিজ্ঞানে বিশ্বাস যাদের, তারা তো মেতে ছিলই অকল্যাণে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের ওপর গভীর বিশ্বাস নিয়ে বিরামহীন কাজ করেছেন বলেই আমরা ১০ বছরের জায়গায় ১ বছরেই টিকা পেয়েছি।
ধর্ষণের পর মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া সেই ‘শ্রমিক লীগ নেতার’ জামিন
যে কোনও টিকা নেওয়ার পর কিছু জ্বর গা ব্যাথা বমি এসব ঘটে, এই টিকাতেও ঘটবে, এতে ঘাবড়ে যাওয়ার তো কিছু নেই। নরওয়ের ২৩ জন বৃদ্ধ রোগী ফাইজারের টিকা নেওয়ার পর মারা গেছে। এটি বেশ দুশ্চিন্তার কারণ। ফাইজারের বলে দেওয়া উচিত ছিল, মুমূর্ষু এবং আশির ওপর বয়স এমন কাউকে টিকা না দিতে। করোনা ভাইরাসকে ঘায়েল করতে যেমন ইমিউনিটি থাকতে হয়, টিকা নিতেও গায়ে বল থাকতে হয়।
ভেবেছিলাম বিশ্বের সবার সামনে যখন প্রাণঘাতি ভাইরাস নেচে বেড়াচ্ছে, সবাই অসহায় হয়ে পড়ছে, তখন বোধহয় মানুষের জন্য মানুষের সহানুভূতি বাড়বে। আশ্চর্য, তা কিন্তু সব সময় ঘটেনি। কেউ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে শোনার পর আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশি বন্ধু সব দূরে সরে গেছে, শারীরিক ভাবে তো দূরত্ব বজায় রাখতেই হয়, কিন্তু মানসিক ভাবে দূরে সরে যাওয়াটা নিশ্চয়ই অমানবিক।
অনেককে বলতে শুনি, এ রোগ কোনও রোগই নয়, কারণ মৃত্যুর হার খুবই কম। গত এক বছরে প্রতিদিন কোভিডে মানুষ মারা যাচ্ছে, ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, তারপরও নাকি এ রোগ কোনও রোগই নয়। যাদের কাছের কারও বা প্রিয় কারও মৃত্যু হয়নি কোভিডে, তারা এর ভয়াবহতা আঁচ করতে আজও পারেনি। অচেনা কারও মৃত্যু কি মৃত্যু নয়?
অনেকে, যারা টিকা নিতে চাইছে না, বলছে, এত তাড়াহুড়ো করে যে টিকা বের হয়, সে টিকায় বিশ্বাস না করাই ভালো। এ টিকার জন্য লোকবল অর্থবল অন্য টিকার চেয়ে লক্ষগুণ বেশি ছিল বলেই এ টিকা তাড়াহুড়ো করে সম্ভব হয়েছে। হাজারো লোকের ওপর ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ প্রমাণিত হওয়ার পরই তো ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। স্পুটনিক ভি ট্রায়াল ছাড়াই বাজারে এসেছে। রাশিয়াতে নাকি ট্রায়াল দেওয়ার চল নেই। এই টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনও পায়নি। কিছু কিছু লোক দেখলাম, রাশিয়াকে ভালোবাসে বলে স্পুটনিক টিকাকেও ভালোবাসে। জানিয়ে দিয়েছে, ট্রায়ালের দেয়নি না দিক। যে দেশ মহাশূন্যে মানুষ পাঠিয়েছে সবার প্রথম, সে দেশের টিকাকে চোখ কান বুজে বিশ্বাস করা যায়,নিলে তারা স্পুটনিকই নেবে।
কোভিড থেকে বেঁচে এলেও অনেকের শরীর কিন্তু আগের মতো সুস্থ হচ্ছে না। শরীরের কোথাও না কোথাও সমস্যা হচ্ছে। পেশির দূর্বলতা তো অনেকের কাটতেই চাইছে না। এই ভাইরাস বিশ্বে রয়েই যাবে। সবাই টিকা নেওয়ার পর এর কামড় হয়তো এতটা হিংস্র হবে না। তবে বছর বছর আমাদের এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে টিকা নিতে হবে, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের জন্য যেমন নিই।
জীবন চলতে থাকবে। যতদিন বেঁচে থাকি, করোনা ভাইরাস গোটা মানবজাতিকে গৃহবন্দী করেছিল, তা ভুলবো না। কী জানি, হলফ করে বলতে পারি না ভুলবো না। মানুষের তো আবার ভুলো মন।
news24bd.tv তৌহিদ