শহরের তরুণদের শেকড়ের সন্ধান দিতে নবান্ন উৎসব

সংগৃহীত ছবি

শহরের তরুণদের শেকড়ের সন্ধান দিতে নবান্ন উৎসব

অনলাইন ডেস্ক

আবহমান গ্রামবাংলার লোক উৎসবের নাম নবান্ন। এ উৎসব ঘিরে পিঠা-পুলি-পায়েসের সেই ঐতিহ্যকে নাগরিক জীবনে তুলে ধরতে ২৪তম বারের মতো ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় নবান্ন উৎসব। এটির আয়োজন করছে জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাঠে উন্মুক্ত মঞ্চে বাঁশির মূর্ছনায় শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

উৎসব আয়োজন কমিটির অন্যতম সদস্য মানজারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, নবান্ন উৎসবকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। সকালের পর্বে রাখা হয় গান, কবিতা ও নৃত্য। দিনের শেষভাগে একই মঞ্চে থাকছে সাংস্কৃতিক আয়োজন।

অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সালমা আকবর, মহাদেব ঘোষ, আবু বকর সিদ্দিক, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, অনিমা মুক্তি গোমেজ, সালমা আকবর।

দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস, বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।

নৃত্য-গীত-বাদ্যের মাঝে উৎসব মঞ্চে ছিল নবান্ন কথন পর্ব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শাহিদুর রাশিদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এ পর্বের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সহসভাপতি কাজী মদিনা। নবান্ন কথন পর্বটি সঞ্চালনা করেন পর্ষদের সহ-সভাপতি সঙ্গীতা ইমাম।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, নবান্ন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্য উৎসব। এটি কৃষকের মুখে এনে দেয় অনাবিল হাসি আর আনন্দ। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন নবান্ন। এ উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে। এটি বাঙালির জনজীবনে নিয়ে আসে অনাবিল সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধির বার্তা।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, নগরে বসবাসের কারণে আমরা ভুলে যাই, আমাদের পূর্ব পুরুষদের কেউ না কেউ কৃষক ছিলেন। শহরের তরুণরা জানেন না গ্রামের বৈচিত্র্যময় পিঠা-পুলির কথা। আমরা সেই ঐতিহ্য ও শেকড়ের কথা বলতে চাই তরুণদের। তাদের নিয়ে যেতে চাই শেকড়ে।  

নবান্ন কথন শেষে উৎসবের মঞ্চে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন- রূপা চক্রবর্তী, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, আহকামউল্লাহ। উৎসব মঞ্চে সকালের পর্বে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্য সংগঠন নৃত্যম, দিব্য, কথক নৃত্য সম্প্রদায়, স্পন্দন, নৃত্যজন ও সৃষ্টিশীল একাডেমি। এছাড়া শিশু সংগঠন শিল্পবৃত্তের পরিবেশনাও ছিল নবান্ন উৎসব মঞ্চে।

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল বাহারি ধরনের পিঠার স্টল। উৎসবে আসা অতিথিদের জন্য খৈ, মুড়কি, মোয়া ও মুরালির ব্যবস্থাও ছিল।

বুধবার বিকেলে নবান্ন উৎসব উদযাপন মঞ্চে থাকবে শিশু সংগঠনের বৃন্দ আবৃত্তি, গান ও নাচ। দনিয়া সবুজ কুঁড়ি কচি কাঁচার মেলা, স্বপ্নবীনা শিল্পকলা বিদ্যালয়, তারার মেলা সঙ্গীত একাডেমি আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করবে। নৃত্য পরিবেশনে থাকবে স্বপ্নবিকাশ কলাকেন্দ্র ও নৃত্যমঞ্চ।

উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শান্তা সরকার, দেলোয়ার বাউল, সময় বড়ুয়া, সুরাইয়া পারভীন, মাহজাবিন রহমান শাওলী, আবিদা রহমান সেতু, রাকিব খান লুবা, মোহাম্মদ মারুফ হোসেন, আতাউর রহমান,  শ্রাবণী গুহ রায়, ফারজানা ইভা, অবিনাশ বাউ, সঞ্জয় কবিরাজ, ফেরদৌসী কাকলি, বিশ্বজিৎ রায়, মনিরা ইসলাম গুরুপ্রিয়া, নবনীতা জায়ীদ চৌধুরী, মেহেদী ফরিদ, তামান্না নিগার তুলি।

দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সুরসাগর ললিতকলা একাডেমি, পঞ্চায়েত, সমস্বর, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-বাফা, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, দৃষ্টি, সুরনন্দন নজরুল চর্চা কেন্দ্র ও ভিন্নধারা।

একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন- রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন নিপু, ফয়জুল আলম পাপ্পু, বেলায়েত হোসেন, নায়লা তারান্নুম কাকলি, লাবনী পুতুল, আজিজুল বাসার মাসুম, আহসান উল্লাহ তমাল, তামান্না সারোয়ার নিপা, তামান্না তিথি ও ফয়সল আহমদ।

দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় থাকবে- ধৃতি নর্তনালয়, ভাবনা, পরম্পরা নৃত্যালয়, কালারস্ অব হিলস, নূপুরের ছন্দ, সিনথিয়া ডান্স একাডেমি ও সুরনন্দন বিদ্যাপীঠ।