আবারও ১৪ ডিসেম্বর?

শোয়াইব জিবরান

আবারও ১৪ ডিসেম্বর?

শোয়াইব জিবরান

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এ বছর এ দিবসটি এজন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ যে, অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ সম্ভবত আরেকটি বুদ্ধিজীবী গণহত্যার আশংকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

গণহত্য বা জেনোসাইড কে অনেকে গণহারে হত্যাকে বুঝে থাকেন। বিষয়টি মোটেই তা নয়।

জেনোসাইড চালানো হয় অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। মূ্লত একটি জাতিসত্তাকে বিকৃত বা নির্মূল করা হয় এর মূল লক্ষ্য। জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক ধারাকে মূলত বহন ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঞ্চারিত করেন বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। ফলত গণহত্যার সময় তারাই প্রথম টার্গেট হয়ে থাকেন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি তথাকথিত মুসলিম শাসকরা মনে করত বাঙালি সংস্কৃতি 'হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি'। ফলে এ জাতিসত্তার বিকৃতি, পরিবর্তন বা বিনাশ প্রয়োজন। তাই পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ, গণহত্যা চালানো হয়। গণহত্যা চালানোর সময় 'হিন্দু', 'ভারতের দালাল' এ অভিযোগগুলো স্পষ্টভাবেই উপস্থাপন করা হয়। অমনকি লুঙ্গি খুলে ধর্মীয় পরিচয় পর্যন্ত পরীক্ষার পদ্ধতি চালু করা হয়।

পৃথিবীতে এ রকম জাতিগত নিধনের ইতিহাস বহুপুরাতন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিটলারের হলোকাস্ট। বলকান অঞ্চলেও এটি ঘটেছে। বসনিয়ায় মুসলিম নিধন সাম্প্রতিক বড় ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যে ঘটেছে কুর্দি নিধন। আর আমাদের পাশে মুসলিম রোহিঙ্গা জাতি নিধনের চিত্র তো আছেই। চিনে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের খবরও প্রায় সময় সংবাদ মাধ্যমে আসে।

ভারতবর্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক গণহত্যার প্রথম পরিকল্পনা করেন লর্ড মেকলে ১৮৩৫ সালে। তিনি তার পরিকল্পনায় বলেন, ভারতবর্ষে এ রকম একটি জাতি বা শ্রেণি গঠন করতে হবে যারা চেহারায় হবে ভারতীয় কিন্তু রুচির দিক থেকে হবে ইংরেজ। শিক্ষাব্যবস্থার পশ্চিমীকরণের ভেতর দিয়ে তিনি সেটা করতেও সফল হন। তার লিগ্যাসি এ অঞ্চল এই মুহূর্তেও ভোগ করছে।

ধর্মের নামে মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলা তেমনি একটি নৌশন। এটি বিশেষভাবে ঘটছে আরবি ভাষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভেতর দিয়ে। এ ধারার সংস্কৃতির সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সংঘাতের ইতিহাস অনেক পুরোনাে। যার সাম্প্রতিক দুটো বড় উদাহরণ হচ্ছে শাহবাগ-শাপলা চত্বর বিরোধ আর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা।


আরও পড়ুন:

ইউটিউবসহ গুগলের বিভিন্ন সেবায় বিভ্রাট

‘সালমান শাহ’ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ২

'জীবনে অনেক ভুল করে দেউলিয়া হয়েছি'

স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড


বাংলাদেশে বাঙালি সংস্কৃতির বুদ্ধিজীবীদের বড় ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। তারপর দেশ স্বাধীন হলেও এ হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়নি। ধারাবাহিকভাবে বাঙালি সংস্কৃতি ধারার বুদ্ধিজীবীরা হত্যাকাণ্ডের বা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বড় দুটো উদাহরণ হচ্ছেন হুমায়ূন আজাদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উপর আক্রমণ। ব্লগার হত্যা এ ধারারই ভিন্ন উদ্যোগ।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে সংঘাতের পর সাম্প্রতিক সময়ে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী স্পষ্টতই তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা করেছে। তারা ঘোষণা করেছে ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসজাত সংস্কৃতির শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। যদি কখনও তা ঘটে তাহলে এর প্রথম গণহত্যার শিকার হবেন এ দেশের বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা।  

ফলত বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা আক্ষরিক অর্থেই এই মুহূর্তে চরম পরীক্ষার মুখোমুখি। এ দেশে আরেকটি ১৪ ডিসেম্বরের রক্তকাণ্ড ঘটবে নাকি বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের সোনার সবুজ বাংলা গড়ে উঠবে তা রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফলাফলই ঠিক করে দেবে।

লেখক: শোয়াইব জিবরান, কবি ও লেখক

news24bd.tv নাজিম