ঈদে নতুন পোশাকের জন্য হাতে চায়ের ফ্লাক্স

ঈদে নতুন পোশাকের জন্য হাতে চায়ের ফ্লাক্স

Other

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। তবে তা কার ও কাদের জন্য। যারা তিন বেলা পেট ভরে খেতে পায় না।

স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেনি, সংসারের ঘানি নিয়ে জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করছে। মায়ের একটি নতুন শাড়ি, ছোট ভাইয়ের ঈদের পোশাক, অসুস্থ বাবার ওষুধ কেনার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছে। তাদের জন্য কি, ঈদ মানে আনন্দ? ঈদ মানে খুশি?

আসাদ শেখ (১১)। রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া কেকেএস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র।

করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ। ঘরে বসে সময় কাঁটে। বাবা লালন শেখ। করোনা কালে কর্ম হারিয়ে ঘরে বসে রয়েছে। দীর্ঘদিন আয়-রোজগার বন্ধ। ধার-দেনা করে সংসার চলে। অসুস্থ শরীর। প্রতিনিয়ত ওষুধ কিনতে হয়। তিন বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। খেয়ে-না খেয়ে আর কয় দিন চলে!

তাই ঘরে রাখা টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আসাদের কিনে নেয় চায়ের ফ্লাক্স। সকাল-সন্ধ্যায় চায়ের ফ্লাক্স হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। চা বিক্রি করে মায়ের হাতে দেয় আয়ের টাকা। আনে অসুস্থ বাবার ঔষুধ।

আসাদ চা বিক্রি শুরু করেছে তাও প্রায় ৬ মাস হলো। প্রতিদিন আয় হয় দেড় থেকে দুইশ’ টাকা। আসাদের আয়ের টাকায় সংসার কিছুটা ভাল চলে। রবিবার সকালে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটের মাঝে এই প্রতিবেদকের সাথে দেখা হয় আসাদের। খোলা একটি জায়গায় কয়েকজন লোক বসা দেখে মুখ ভরা হাসি নিয়ে এগিয়ে এসে বলে স্যার চা দিব।

উপস্থিত সবাই ব্যস্ত। তাই আসাদের কথা কেউ শুনেছে, কেউ শোনেনি। এসময় মুখটি মলিন হয়ে গেল। আসাদের চেহারার দিকে তাকিকে উপস্থিত ৬ জনের সকলের চা দেওয়া কথা বললে নিমিষেই আসাদের মুখে হাসি ফিরে আসে। আনন্দের সাথে সকলের হাতে এক কাপ করে চা তুলে দেয়। এসময় পাশে বসিয়ে কথা বলতে চাইলে মনের আনন্দের বলতে লাগলো সে। স্যার আমি ৫ম শ্রেণীতে পড়ি। বাবা লালন শেখ হকারী করে। তবে করোনার কারণে এখন কাজ নেই। তাই ঘরে বসে থাকে। শরীরটাও ভাল না।

আসাদ আরও বলে, বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে চায়ের ফ্লাক্স কিনি। সেই দিন থেকে প্রতিদিন দুই বেলা, সকাল-সন্ধ্যা চা বিক্রি করি। প্রথমে বাবা জানতো না। এখন জানে।

দুই ফ্লাক্স চা বিক্রি করলে আর কয় টাকা লাভ হয়? হাসি দিয়ে বলে স্যার প্রতি ফ্লাক্সে ১১০/১২০ টাকা লাভ হয়। দুই ফ্লাক্সে ২৩০/২৪০ টাকা লাভ হয়। আমি টাকাগুলো খরচ করি না। মায়ের হাতে দেই।

তোমার এই টাকা দিয়ে কি করে তোমার মা? এমন প্রশ্নে আসাদ বলে, চাউল কেনে, বাজার করে। এই টাকায় এখন আমাদের সংসার চলে। তবে ঈদের মধ্যে সারাদিন চা বিক্রি করি। ৪/৫ ফ্লাক্স চা বিক্রি করা যায়। লাভ বেশি হচ্ছে। দুই দিন যাবৎ চার-পাঁচশ’ টাকা লাভ হয়।

এই টাকা দিয়ে তুমি কি করবে এমন প্রশ্নে আসাদ বলে, কেন স্যার? ঈদে মায়ের জন্য নতুন শাড়ী। ছোট ভাইয়ের নতুন জামা। সেমাই, চিনি ও বাবার জন্য জন্য একটি নতুন লুঙ্গি। তোমার জন্য কিছু কিনবে না। তখন বলে স্যার এত টাকা কোথায় পাব?

এসময় পাশে বসে থাকা বিআইডব্লিউটিসি কর্মরত রাজু হাউলাদার আসাদের কথা শুনে পাঁচশ’ টাকা দিয়ে বলেন বাবা তুমি একটি নতুন জামা কিনে নিও। আসাদ টাকা নিয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল আর কোন প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে। উপস্থিত সকলে আসাদের চলে যাওয়ার দিকে নীরবে তাকিয়ে রইল।


আরও পড়ুনঃ

পর্নতারকা ডালিয়া স্কাইয়ের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার

পাকিস্তানে আফগান রাষ্ট্রদূতের মেয়েকে অপহরণ ও নির্যাতন

সৌদি আরবে বন্ধ হচ্ছে নামাজের সময়ে দোকান বন্ধ রাখার নিয়ম

'ছাত্রলীগ সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে'


আসাদের ব্যাপারে কথা হয় দৌলতদিয়া কর্মজীবি কল্যাণ সংস্থা কেকেএস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরি রাণীর সাথে। তিনি বলেন, আসাদ ভাল ছাত্র। স্কুলচলা কালীন প্রতিদিন স্কুলে আসতো। তবে স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক দিন যাবৎ যোগাযোগ নেই।

news24bd.tv / নকিব