ঠাকুরগাঁওয়ে বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের তিন শিশু

ঠাকুরগাঁওয়ে বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের তিন শিশু

Other

ঠাকুরগাঁওয়ে বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের তিন শিশু। অন্যান্য শিশুর মত স্বাভাবিক জীবন ছিল তাদের। স্কুলে যেত, দুরন্তপনা করে বেড়াত, আবার বাবার কাজেও সহযোগীতা করতো তারা।

এই তিন শিশু ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলা ৩নং বকুয়া ইউনিয়নের বলিহন্ড গ্রামের শ্রী বাদুল সিংহের ছেলে।

শেষ সম্বল বিক্রয় করে দিনমজুর বাবা এখন সকলের কাছে সহযোগীতা প্রার্থনা করছেন সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য।   

হঠাৎ এই বিরল রোগে চিকিৎসার অভাবে আজ প্রতিবন্ধী তিন ভাই। প্রথম বড় ভাই রমাকান্ত (১৪) দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছাত্র থাকা অবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত হয়। তার পরে দ্বিতীয় ভাই জয়েন্ত (১২) বড় ভাইয়ের বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হয়।

আর তৃতীয় ভাই হরিদ্র (৮) সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পথে। তিন ছেলেকে নিয়ে পরিবারটি এখন পথে বসেছে।

মঙ্গলবার বলিহন্ড গ্রামের শ্রী বাদুল সিংহের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় তিন শিশু বসে রয়েছে। মা বাড়ির কাজে ব্যস্ত। বাবা মানুষের জমিতে দিনমজুরের কাজে গিয়েছে। মা বাসার কাজের পাশাপাশি সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত থাকছে সবসময়। সন্তানেরা নিজেরা চলাফেরা করতে পারে না। তাদের সব কাজেই মা কে সহযোগীতা করতে হচ্ছে। তিন সন্তানকে নিয়ে এক প্রকার সমস্যায় রয়েছে তাদের মা। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল, পায়খানা-প্রসাব সব কিছুতেই মা ছাড়া বাচ্চাগুলো অচল। দিনমজুরের কাজ করে বাবা যা পায় তাই দিয়ে সন্তানের খাওয়া-দাওয়া ও পরিবারের খরচ চালায়। বাচ্চাগুলোর চিকিৎসা করার কোন টাকা নেই বাবার কাছে। কোন প্রকার সরকারী সহযোগীতাও পায় না জানালেন বাবা। এক প্রকার ক্ষোভ নিয়েই দিনমজুর পিতা জানালেন কি হবে এসব ছবি তুলে। কেও তো আমাদের দিকে তাকায় না। বাচ্চাগুলাকে নিয়ে আছি মহা সমস্যায়।

এলাকাবাসি জানায়, জন্মের পরেই বাচ্চাগুলো ভালো ছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই হাত পা শুকিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাগুলোর। বড় ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের বাবা সর্বশান্ত হয়ে যায়। শেষে ডাক্তার জানায় এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তাই পরের দুই বাচ্চার আর কোন চিকিৎসা করায় নাই তাদের বাবা। আর চিকিৎসা করানোর মত টাকা নেই অসহায় দিনমজুর পিতার। তাই এভাবেই কষ্ট করে দিন চলতেছে তাদের। কারো কোন সহযোগীতাও পায় নাই পরিবারটি।

শিশুগুলোর মা কাজলী রানী জানায়, তিনটাই ছেলে সন্তান আমার। জন্মের পরে স্বপ্ন ছিল এই তিন সন্তান পরিবারের অভাব দুর করবে। পড়ালেখা করে বড় হয়ে বাবা, মা কে দেখবে। কিন্তু কি এক অসুখে আমার তিন সন্তান এখন পঙ্গু। চলাফেরা করতে পারে না। তাদের সব কাজ আমাকেই করতে হয়। সন্তান আমার তাই কষ্ট হলেও তাদের দেখভাল করতে হবে আমাকেই।

শ্রী বাদুল সিংহ ক্ষোভের সাথে বলেন, কত লোক এলো, ছবি তুললো, কেউ তো সহযোগীতা করলো না। অসুস্থ সন্তানদের ভালোমন্দ খাওয়াতে পারি না। তিন বেলা খাওয়ার জুটাই কষ্ট আমার জন্য আর চিকিৎসা করাবো কিভাবে। আমি দিনমজুরের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনরকম দিন চলে। আমার নিজের কোন জমি নেই। মানুষের জমিতে কাজ করি। এই তিন ছেলে ছিল আমার স্বপ্ন। বড় হয়ে তারা আমাদের অভাব দুর করবে। কিন্তু গরিবের স্বপ্ন তো আর পূরণ হল না। এখন সন্তানগুলোকে বাচিঁয়ে রাখতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা চাই। আমাকে একটু সহযোগীতা করলে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারি।

আরও পড়ুন:


রাজ কুন্দ্রার পর্নকাণ্ডে যা বললেন সোফিয়া

বান্দরবানে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা

পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘বাংলা' রাখার অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রী মমতার

টিকা: ফাইজার-অ্যাস্ট্রাজেনেকার অ্যান্টিবডি ১০ সপ্তাহে কমতে পারে ৫০ শতাংশ

হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এটি একটি বিরল জেনেটিক রোগ। রোগের নাম হচ্ছে Duchenne Muscular Dystrophy। এই রোগের এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসা আবিস্কার হয় নাই। এই রোগ সাধারন্ত ছেলেদের হয়ে থাকে। তবে তার তৃতীয় ছেলেটি এখনো সেভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয় নাই। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা করা গেলে তার তৃতীয় সন্তানটি সুস্থ ভাবে বেচেঁ থাকতে পারবে।

এদিকে, হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনিরুল হক খান উপস্থিত হয়ে একটি হুইল চেয়ার উপহার দেন পরিবারটিকে। এসময় তিনি বলেন, এটি একটি বিরল রোগ। তাই চিকিৎসার জন্য পরিবারটিকে সহযোগীতা করা হবে। এছাড়াও সরকারী যে সকল সুযোগ সুবিধা আছে সেগুলো পাইয়ে দিতেও পরিবারটিকে সহযোগীতা করা হবে। পরিবারের তৃতীয় বাচ্চাটি এই রোগে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তাই শিশুটিকে সুস্থ রাখতে যে সকল চিকিৎসা আছে সেগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

news24bd.tv রিমু

এই রকম আরও টপিক