ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে এ কেমন প্রতারণা!

অনলাইন ডেস্ক

সহস্র বছর ধরে প্রেম-ভালোবাসা যেমন সৃষ্টি করেছে শিল্প-সাহিত্য-কাব্য, অন্যদিকে সংসার ভেঙে করেছে বৈরাগী, ধর্মান্তর কিংবা দেশান্তর। হৃদয় নাড়া দেয় তেমনই একটি গল্প এটি।

সে গল্পের মূল চরিত্র দক্ষিণ কোরিয়ান নারী ওকিয়াং। যিনি নিজের জমানো টাকা আর ভালোবাসার মানুষ নিয়ে ৩৪ বছর বয়সে আসেন বাংলাদেশে।

ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে শুরু করেন প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই। কিন্তু পরে সেই স্বামীর প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে ১৭ বছর ধরে মামলার জালে ঘুরপাক খাচ্ছেন এই বিদেশী নারী।

ওকিয়াং, উচ্চ শিক্ষিত ও দক্ষিণ কোরিয়ার ধনী পরিবারের মেয়ে। টেক্সি চালক বয় ফ্রেন্ডকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের জমানো ও চাকুরি থেকে অবসরের টাকা নিয়ে ১৯৯৬ সালে পাড়ি জমান বাংলাদেশে।

৩৪ বছর বয়সে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে গাজীপুরে গড়ে তোলেন তাইহুং পাকেজিং বিডি নামে ইন্ডাস্ট্রি। ভালোবাসার মানুষ বো সান পার্কের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হন।

কিন্তু স্বামী বো সান পার্ক এক সময় হুন্ডি ব্যবসা ও অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়লে বাধ সাধেন স্ত্রী। শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এক পর্যায়ে পাকেজিং ইন্ডাস্ট্রির সব শেয়ার নিজের নামে লিখে নেন স্বামী।

তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নের ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিতাড়িত হয়ে আদালতের দারস্ত হন ওকিয়াং। জড়িয়ে পড়েন মামলার জালে। ইন্ডাট্রি ফিরে পেতে স্বামীর বিরুদ্ধে, নির্যাতন, প্রতারণার ও শেয়ার ট্রান্সফার নিয়ে মামলা করেন। এভাবে প্রায় ২০টির বেশি মামলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। আদালতের বারান্দাতে ঘুরতে ঘুরতে ওকিয়াংয়ের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ১৭বছর। তবুও নিজের অধিকার ফিরে পেতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ৫৭ বছরের এই নারী।

ওকিয়াং এর আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম জানান, বাংলাদেশের আইন-আদালতের প্রতি তার(ওকিয়াং) আস্থা আছে। আমার মক্কেলের বিশ্বাস তিনি একদিন ন্যায় বিচার পাবেন।

সহযোগিতার জন্য প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর। কিন্তু মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় আইনজীবীদের খরচ দিতে না পেরে এখন নিজেই আদালতে মুভ করেন। এদেশে থেকেই আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চান। তার বিশ্বাস আদালতের মাধ্যমেই একদিন অধিকার ফিরে পাবেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আনজীবী ড. বশির উল্লাহ জানান, রাষ্ট্র পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আবার সব ক্ষেত্রে তাকে রাষ্ট্রপক্ষের সহযোগিতা দেওয়ার কোনো সুযোগও নেই।

ওকিয়াং আজও বিশ্বাস করেন একদিন তিনি ফিরে পাবেন ফ্যাক্টরির মালিকানা। প্রয়োজনের এদেশেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন এই দৃঢ়চেতা নারী।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)