ড্রাগন ব্লাড ট্রি: প্রকৃতির অনুপম ছাতা

ড্রাগন ব্লাড ট্রি: প্রকৃতির অনুপম ছাতা

Other

ড্রাগন ব্লাড ট্রি এক বিস্ময়কর গাছ। ইয়েমেনের সকোট্রা দ্বীপ এবং আফ্রিকার অল্প কিছু স্থানে এই গাছ জন্মায়। শুষ্ক স্থানে জন্ম বিধায় কান্ড আর ডালপালাগুলো প্রসারিত করে বাতাস থেকে আর্দ্রতা গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হয় এদের। তাই এই গাছগুলো ছাতার আকৃতি ধারণ করে।

প্রকৃতির বুকে অনুপম ছাতার মত সুন্দর গাছটির কোন অংশ কেটে ফেললে টাটকা রক্তের মত কস বেরোতে থাকে। এ গাছ ১০ বছরে মাত্র ৩ ফুট বৃদ্ধি পায়। ১৫ বছর পর প্রথম সুরভিত সাদা ফুল ফোটে এই গাছে।

এ গাছে কোনো বর্ষবলয় তৈরি হয় না।

গাছের কাণ্ডের সংখ্যা দেখে এর বয়স নির্ধারণ করা হয়। গাছটি বছরে মাত্র একবার ফুল দেয়। সবচেয়ে আশ্চর্যকর ব্যাপার যে, উপযুক্ত পরিবেশে ড্রাগন ব্লাড ট্রি কয়েকশ বছর বাঁচতে পারে।

news24bd.tv

প্রায় সাড়ে তিন কোটি বছর আগে মূল আরব ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ। এই কারণে চারটি দ্বীপে বিবর্তনের প্রভাব পড়েনি। প্রকৃতির খেয়ালে তাই এখানে পরিবর্তনের ছাপ পড়েনি। তার জেরেই এখনও টিকে রয়েছে অতি প্রাচীন হরেক রকম প্রজাতির গাছ।

বর্ষায় সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জের আবহাওয়া ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে। বাতাসে উপস্থিত জলকণা পাতার সাহায্যে শুষে নেয় ড্রাগন ব্লাড ট্রি। তারপর শাখা-প্রশাখা এবং শিকড়ের সাহায্যে গাছের সারা শরীরে তা পৌঁছে যায়। গাছের ওপরের অংশে থাকে সবুজ পাতার ঠাসবুনট, যা দূর থেকে সুন্দর ছাতার মতো দেখায়। এর পাতাগুলো লম্বায় ৬০ সেমি ও পাশে ৩ সেমি হয়ে থাকে।

news24bd.tv

স্থানীয় লোকজনের কাছে গাছটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সর্বরোগের চিকিৎসায় অনেকেই এই গাছের আঠা ব্যবহার করে। এ ছাড়া গ্রিক, রোমান ও আরবরা ডায়রিয়া, আমাশয়, আলসার, জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহার করে। আঠারো শতকের দিকে এই আঠা ভায়োলিন বার্নিশের কাজে ব্যবহূত হতো। তখন গাছের আঠা রপ্তানি হতো।

গাছের গাঢ় লাল রস থেকেই স্থানীয়দের মুখে গাছটির নাম হয় ড্রাগন ব্লাড ট্রি। যা ড্রাগনের রক্ত নামেই পরিচিত। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে প্রমাণ করেন যে এটা আসলে গাছের রেজিন।


আরও পড়ুনঃ


নেত্রকোনায় বেগুনের বাম্পার ফলন

সাকিবকে ধন্যবাদ আলোচনাটা শুরু করার জন্য

‘নেত্রী দ্য লিডার’ এর জন্য গোফ ফেলেও ভাইরাল অনন্ত জলিল

পত্রিকার সাংবাদিকগুলো বিসিএস ক্যাডার চাকরিটাকে বিশাল কিছু বানিয়ে ফেলেছেন


এই অদ্ভূত নামের পেছনেও এক মজাদার কাহিনী রয়েছে। গ্রিক পুরান কথায় কথিত আছে, একদা মহাবীর হারকিউলিসকে হেসপেরাইডস-এর বাগান থেকে তিনটে সোনার আপেল ফিরিয়ে নিয়ে আনতে হত। কিন্তু এই আপেল পাহারা দিচ্ছিল শক্তিশালী বিশালদেহী এক শতমুখী ড্রাগন। যার নাম ল্যান্ডন।

ড্রাগনকে না মেরে আপেল ফিরিয়ে আনা অসম্ভব ছিল। কিন্তু স্বয়ং হারকিউলিস যখন যোদ্ধা, তখন শত্রুকে পরাজিত হতে হবেই। হারকিউলিসের সঙ্গে যুদ্ধে ড্রাগনটির মৃত্যু হয়। তার গাঢ় লাল রক্ত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। পরবর্তীতে সেই রক্ত থেকেই নাকি এই ড্রাগন ট্রির জন্ম। যার কারণে গাছটি আজ ড্রাগন ব্লাড ট্রি নামে পরিচিত।

দূষণের কারণে ক্রমেই এই বিরল গাছের অস্তিত্ব সঙ্কটময় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের জেরে আর্দ্রতা হারাচ্ছে এই অঞ্চলের বাতাস। ফলে দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে ড্রাগন ব্লাড ট্রি-রা।

news24bd.tv / নকিব