আবুধাবিতে বিশ্বের বৃহত্তম বাজপাখির বিশেষায়িত হাসপাতাল

আবুধাবিতে বিশ্বের বৃহত্তম বাজপাখির বিশেষায়িত হাসপাতাল

Other

শুধু মানুষের চিকিৎসার জন্য নয়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পশু-পাখির হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু শুধু বাজপাখির জন্যই আস্ত একটি হাসপাতাল! অবিশ্বাস্য হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এমন দুটি হাসপাতাল রয়েছে। এর একটি আবুধাবি ফ্যালকন হসপিটাল। অপরটি দুবাই ফ্যালকন হসপিটাল।

দুটিই শুধু বাজপাখির জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসালয় বা আরোগ্য নিকেতন।  

বাজপাখিদের চিকিৎসার জন্য ১৯৯৯ সালের ৩রা নভেম্বর আমিরাতের পরিবেশ সংস্থা ২০০ পাখির স্থান সংকুলানের ব্যবস্থা সম্বলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবুধাবি ফ্যালকন হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করে। এটি বিশ্বে এ ধরনের বৃহত্তম হাসপাতাল। এ পক্ষী নিরাময় কেন্দ্রে ঢোকার মুখেই বিশাল আকৃতির একটি বাজপাখির ভাস্কর্য আগতদের স্বাগত জানায়।

news24bd.tv

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাজ ও ঈগল পাখি কিংবা বাঘ-সিংহ পোষার ঘটনা নতুন নয়। এটি আরব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিরই অংশ। বাজ ও ঈগল প্রীতির জন্য আরবরা সারা দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের রাজধানী ও শহর-নগরগুলোতে বাজ ও ঈগলের নানা আকৃতি ও ধরনের বাহারি ও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য শোভা পায়।

news24bd.tv

কয়েক বছর আগে সৌদি আরবের এক যুবরাজ ৮০টি বাজপাখি বহনের জন্য পুরো একটি বিমান ভাড়া করে আলোচনায় আসেন। শেখদের ঘরে ঘরে বাজপাখি পোষা হয়। বাজপাখি দিয়ে শিকার করা শেখদের প্রিয় শখ। এমনকি শিকার করাতে বাজপাখিকে ইউরোপ, আমেরিকা পর্যন্ত নিয়ে যান তারা।

news24bd.tv

বাজপাখির একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো বড় শিকার ধরে জ্যন্ত অবস্থায় মালিকের কাছে নিয়ে আসে। উল্লেখ্য, বিমানে একমাত্র বাজ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর ভ্রমণের অনুমতি নেই। তাও আবার কেবল বিলাসবহুল বিজনেস বা ফার্স্ট ক্লাসে। রঙচঙে বাজ দেখতে খুবই সুন্দর। এক-একটি সাধারণ বাজপাখির দাম প্রায় তিন-চার হাজার দিরহাম। কিন্তু ভালো জাতের বাজের দাম হতে পারে এক লাখ দিরহামেরও বেশি।

news24bd.tv

আমিরাতিরা হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসককে ডাকেন ‘দক্তরা’ নামে। তার নাম মার্গিট মুলার। জন্ম জার্মানির উল্ম শহরে৷ জার্মানিতেই তিনি পশুচিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন৷ তাঁর গবেষণা ছিলো বাজপাখির পায়ের রোগ নিয়ে৷ এরপর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে আবুধাবি আসেন তিনি৷ ২০০১ সালে তিনি এ হাসপাতালে যোগ দেন। এরই মধ্যে এই বাজপাখি বিশেষজ্ঞের সুনাম আরব সংযুক্ত আমিরাতের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতায় তিনি এক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃস্থানীয়।

news24bd.tv

হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়ত ভিড় লেগেই থাকে৷ তাই চিকিৎসা নিতে এসে অপেক্ষা করারও ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি পাখির জন্য ২০ সেন্টিমিটার উঁচু একটি কাঠের খুঁটি বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিটি খুঁটি ঢেকে দেয়া হয়েছে কৃত্রিম ঘাস দিয়ে। তবে যাতে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়ে, সেজন্য সবার চোখ একটি চামড়ার পট্টি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। দিন দিন চিকিৎসার জন্য আসা পাখির ভিড় বেড়ে চলেছে। বর্তমানে প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ১১ হাজারেরও বেশি বাজপাখিকে চিকিৎসা সেবা দওয়া হচ্ছে এ হাসপাতালে। যদিও প্রথম দিকে এ সংখ্যা কম ছিলো। ১৯৯৯ সালে চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ১০ হাজার বাজপাখিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।

news24bd.tv

মানুষের চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার, পাখির জন্যও তার সবই আছে এই হাসপাতালে। অপারেশন থিয়েটার, ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগের জন্য কোয়ারেন্টাইন রুম, পরীক্ষাগার, এক্সরে রুম, এমনকি রয়েছে একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রও। একটি ছোট শিশুর জন্য যে আকারের মেশিন দরকার, একটি বাজপাখিরও সেই আকারের মেশিনেই চিকিৎসা করা যায়৷ প্রি-ম্যাচিওর শিশুদের জন্য যে ইনকিউবেটর ব্যবহার করা হয়, বাজপাখিদের ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।

news24bd.tv


আরও পড়ুন: ঘোড়ার টানে মিশরে অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি


বাজপাখিকে দেখে এমনিতে এর স্বাস্থ্য সমসা বোঝা যায় না। তাই শুধু অসুখ নয়, পোষা পাখিটির নিয়মিত চেক-আপ করাতেও এই হাসপাতালে আনতে হয়৷ রক্ত পরীক্ষা এই নিয়মিত চেক-আপের অংশ। এছাড়া ভাঙা পা ও পাঁজর নিয়েও আসেন অনেকে৷ ভাঙা পালক, চামড়ায় ক্ষত ও সংক্রমণও দেখা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে ওষুধ বা ব্যান্ডেজেই যথেষ্ট হয় না। প্রয়োজন হয় শল্যচিকিৎসার। পাখির পালক ভেঙে গেলে বা ঝরে গেলে যাতে উড়তে সমস্যা না হয়, আছে সে ব্যবস্থাও। বিভিন আকার ও রংয়ের পালক সাজানো রয়েছে হাসপাতালের স্টোর রুমে৷ এই পালক আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয় ঝরে যাওয়া পালকের জায়গায়। বাজপাখির অবশ্য একদিন পরেই প্রাকৃতিকভাবেই নতুন পালক গজায়।

news24bd.tv

বাজপাখির চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। কিন্তু প্রিয় পোষা প্রাণী বাজপাখির সুস্থতার জন্য প্রচুর খরচ করতেও পিছ পা হন না আরবরা। শুধু আরব আমিরাত নয়, আশপাশের বহু দেশের বাজপাখির মালিকরা তাদের পোষা বাজপাখিকে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা করান। তাই বাজপাখিরদের পাসপোর্ট লাগে ৷ জন্মতারিখ, মালিকের নাম ও বাজের গলায় ঝুলানো ১৩ ডিজিটের মাইক্রোচিপের নম্বরও থাকে এই পাসপোর্টে। বাজপাখির চেহারা দিন দিন বদলায়, তাই পাসপোর্টে বাজপাখির কোন ছবি রাখা হয় না।

news24bd.tv

হাসপাতালটি ২০০৭ সালে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাজপাখি কেন এতো জনপ্রিয়, তা দর্শণার্থীদের সামনে তুলে ধরতে এখানে একটি জাদুঘরও স্থাপন করা হয়েছে৷ বর্তমানে আবুধাবির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটি৷ আরব আমিরাত ভ্রমণে গেলে ব্যতিক্রমী এই হাসপাতালটিও ঘুরে আসতে পারেন।

হারুন আল নাসিফ : কবি, ছড়াকার, সাংবাদিক

news24bd.tv আহমেদ