পঞ্চগড়ে নদীতে বোরোর আবাদ, সার কীটনাশকে হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য 

পঞ্চগড়ে নদীতে বোরোর আবাদ, সার কীটনাশকে হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য 

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়:

উত্তরের সীমান্ত জেলা হিমালয়ান সমতল অঞ্চল খ্যাত পঞ্চগড়ের নদনদীগুলোতে বেড়েছে বোরো ধানের আবাদ। আবাদী জমিহীন কৃষকেরা হাটু পানির এই নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে চর এলাকায় বোরোর আবাদ করছেন। সেচ খরচ নেই বলে উৎপাদন খরচ কম, অন্যদিকে পলি মিশ্রিত উর্বর জমি হওয়ার কারণে ফলনও হচ্ছে ভালো। ফলে কৃষকের লাভ বেশি।

কিন্তু সার কীটনাশকের ব্যবহার, স্রোত আটকে চাষবাসের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীব বৈচিত্র্য। স্থানীয়দের দাবি চাষিদের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীগুলো খনন করে পুরনো পরিবেশ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

পঞ্চগড় জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোটবড় ৪৬ টি নদী। পরিসংখ্যান মতে এতো নদী অন্য কোন জেলায় প্রবাহিত হয়নি।

এই নদীগুলোর উৎপত্তি হিমালয় পাহাড় এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সমতল অঞ্চল। প্রায় ৭ টি নদীর উৎপত্তি এই জেলার বিভিন্ন গ্রামে। নদীগুলো সুপ্রাচীন কাল থেকে এই জেলার কৃষি অর্থনীতি, পর্যটন এবং পরিবেশগত উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে নদীগুলো ভরাট হয়ে  বিলীন হওয়ার পথে। দখল এবং অপরিকল্পিত ভাবে পাথর বালি উত্তোলনের ফলেও বেশ কয়েকটি নদী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই নদীগুলোতে বর্তমানে বোরোর আবাদ বাড়ছে।  

ponchogor

গত কয়েকবছর ধরেই নদীর চর এবং স্রোতে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান রোপণ করছেন। চাষাবাদের জমি নেই এমন কৃষকেরা এই আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। তারা বলছেন বর্ষাকালে নদীতে প্রচুর পানি থাকে। তখন কোন আবাদ হয়না। আর শুকনো মৌসুমে নদী শুকিয়ে যায়। তাই এই সময়ে তারা নদীতে আল বেঁধে, জমি চাষাবাদের উপযোগী করে বোরো ধানের আবাদ করছেন। এই আবাদে তাদেরকে সেচ দিতে হয় না। বোরোর ফলনও ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মন ধান পান তারা।  

মাঝিপাড়া এলাকার মশিউর রহমান জানান, ডাহুক নদীর পাড়েই আমার বাড়ি। কৃষি করার মতো জমি নেই। নদীতে চর পড়েছে। এই জমি বোরো ধানের আবাদের জন্য তৈরি করছি। প্রতিবছর ৫০ শতক জমিতে বোরো ধান লাগাই। ২৫ থেকে ৩০ মন ধান পাই। তা দিয়ে বছরে ঘরের ধানের ভাত হয়ে যায়।  

ponchogor

শুধু বোরো নয় কিছু এলাকায় অন্যান্য ফসলও আবাদ হচ্ছে। পেয়াজ, ভুট্টা, বাদাম সহ নানা ধরনের শাক সবজিও আবাদ হচ্ছে। কৃষকেরা অগ্রাহায়ন মাস থেকে নদী কেটে জমি প্রস্তুত করে । মাঘ থেকে ফাল্গুন মাসে বোরোর চারা রোপণ করে। জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরোধান কেটে ঘরে তোলেন।  

তবে বোরো আবাদের ফলে কৃষকেরা লাভবান হলেও হুমকির মুখে পড়েছে জীব বৈচিত্র্য। স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা বলছেন সার কীটনাশকের ব্যবহার ও নদীতে বাঁধ দিয়ে আবাদের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী মাছ সহ জলজ কীটপতঙ্গ। দেখা মিলছেনা নদী কেন্দ্রিক জীবন যাপন করা পাখিদের। স্থানীয়রা চায় নদীগুলো খনন করা হোক। তারা বলছেন নদীগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে।  

ponchogor

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী কাজী মখছেদুর রহমান জানান, নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে দ্রুত খনন করা দরকার। যে যার মতো আবাদ করছে। চরগুলোতে আবাদ হলে সমস্যা নেই। কিন্তু নদীর স্বাভাবিক গতিপথ আটকে আবাদ করার ফলে জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।  

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। এই ঘোষণাকে সফল করতে আমরা লাভ জনক কৃষি করতে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। এবার এই জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। নদীতে বোরো চাষিদেরকে জীববৈচিত্র্য ঠিক রেখে আবাদ করার জন্য সচেতন করা হচ্ছে।

news24bd.tv/কামরুল