বাচ্চা কী মানসিক সমস্যায় ভুগছে, বুঝবেন যেভাবে  

এক মা ও শিশু । ফাইল ছবি।

বাচ্চা কী মানসিক সমস্যায় ভুগছে, বুঝবেন যেভাবে  

অনলাইন ডেস্ক

সন্তান কি হঠাৎ খুব চুপচাপ হয়ে গেছে ? পড়াশোনা বা খেলাধুলায় অমনোযোগী ? তার প্রিয় খাবারেও রুচি নেই? কথা শুনছে না ? কোনো কিছুতেই মনোসংযোগ নেই ?

যদি লক্ষ্য করেন বাচ্চার আচরণে এই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর হ্যা হয়ে যাচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে আপনার বাচ্চার মন ভালো নেই। মন কোনো কারণে যে কারো এক বা দুইদিন ভালো না ই থাকতে পারে কারও। কিন্তু কোন কারণ ছাড়া ক্রনিক মন খারাপ থাকাটাই মানসিক সমস্যা। বাচ্চা বলে সে নিজেও বলতে পারবে না যে তার কিছু সমস্যা হচ্ছে।

ফলে নজর রাখতে হবে আপনারই বাচ্চার দিকে।

মনোবিদেরা বলছেন, আগে ডিপ্রেশন, মেন্টাল স্ট্রেস এইসব ভারী শব্দগুলোর সঙ্গে মানুষ অতটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু ইদানীংকালে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার কারণ অনেক—

কী কী কারণে মনের চাপ বাড়ছে বাচ্চাদেরও?

১) এখনকার সময়ে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে, স্কুলে ও বাড়িতে সমানতালেই চাপ বাড়ছে বাচ্চাদের।

ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্ট্রেস।

২) আগে বাচ্চারা অনেক বেশি খেলাধূলা করত, কিন্তু এখন স্কুলের বাইরে একস্ট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটি এতটাই বেশি করতে হয় যে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, খেলাধূলার সময় নেই। ফলে বাচ্চাদের মধ্যেও একাকীত্ব বাড়ছে।

৩) এখন বাচ্চারা অনেক বেশি ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত। সারাদিন ল্যাপটপ, মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকায় প্রাপ্তবয়স্কদের অনেক ব্যাপার তাদের নখদর্পনে (Child Mental Health )। ফলে কম বয়স থেকেই এমন অনেক বিষয় জেনে যাচ্ছে বাচ্চারা যা তাদের জানার কথাই নয়।

৪) খাদ্যাভ্যাসেও বদল আসছে। যখন তখন খাওয়া, অপুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ঝোঁকে ওজন বাড়ছে বাচ্চাদের। ফলে তাদের শরীরের পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ব্রেনের পুষ্টিতেও খামতি থেকে যাচ্ছে। সূত্র, দ্য ওয়াল।

দ্য ওয়ালের সমীক্ষা বলছে, পাঁচ থেকে বারো বছরের বাচ্চাদের মানসিক সমস্যা আগের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে ওসিডি, ডিপ্রেশন, প্যানিক অ্যাটাক, বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের সমস্যা দেখা দিতে পারে নানা কারণে। স্কুলে হয়তো হেনস্থার শিকার হচ্ছে, বাড়ির পরিবেশ সুস্থ নয়, মা-বাবার মধ্যে সমস্যা, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া ইত্যাদি। তবে মানসিক সমস্যার পিছনে সব সময়ে যে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকবে, এমনটা না-ও হতে পারে। বাড়ি, স্কুলে কোথাও কোনও সমস্যা নেই, তা-ও বাচ্চার মনখারাপ, এমনটাও হতে পারে।

মানসিক রোগকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। কমন মেন্টাল ডিজ়অর্ডার, সিরিয়াস মেন্টাল ডিজ়অর্ডার। বাইপোলার ডিজ়অর্ডার বা স্কিজ়োফ্রেনিয়া গুরুতর সমস্যা। এ সব ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং, থেরাপি, ওষুধ সবেরই প্রয়োজন। অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যার গভীরতা এবং কারণ বুঝে চিকিৎসা পদ্ধতি স্থির করতে হবে। তবে তার আগে বাচ্চাদের মন ভাল রাখার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই নিতে হবে। মানসিকতা, সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে উৎসাহ এবং স্ট্রেস কাটাতে সন্তানকে সাহায্য করতে হবে। মা-বাবাকে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। ওর সঙ্গে খেলাধুলো করুন, ছবি আঁকুন। সাধারণত ছোটরা এই কাজগুলোর মধ্য দিয়েই নিজের মনের ভাব ফুটিয়ে তোলে।

কোনও নেতিবাচক মন্তব্য, খারাপ কথা, অশালীন অঙ্গভঙ্গি বাচ্চাদের সামনে না করাই ভাল। বাচ্চারা সবটাই চট করে শিখে নেয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা থাকলে বাচ্চার সামনে কখনও ঝগড়া-অশান্তি করবেন না। পরিবারের কোনও ঝামেলা বাচ্চাকে বুঝতেই দেবেন না। এটা ওদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন অন্তত এক পাতা করে গল্পের বই পড়ার একটা তৈরি করান। মোবাইল গেম, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট সরিয়ে ছবি আঁকতে দিন। প্রতিদিন একটা করে নতুন অভিজ্ঞতা লিখতে বলুন। এতে যেমন ওদের মানসিক বিকাশ হবে, তেমনই মেধাও বাড়বে।

 news24bd.tv/ডিডি